আল-আমিন, নীলফামারী
আগস্ট ৮, ২০২২, ১১:৫৮ এএম
আল-আমিন, নীলফামারী
আগস্ট ৮, ২০২২, ১১:৫৮ এএম
চিকিৎসককে লাঞ্চিত করার ঘটনায় নীলফামারী পৌরসভার ছয় নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহকে আসামি করে মামলার ঘটনায় ধোয়াসার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু নাকি সংকটাপন্ন অবস্থায় রোগীকে নিয়ে আসায় তার মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে মাহফুজুর রহমান দায়িত্বরত চিকিৎসককে লাঞ্চিত করাসহ সরকারী কাজে বাঁধা দেন বলে অভিযোগ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সদর থানায় মামলা করেন নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আবু আল হাজ্জাজ। মামলা নং-০২।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা তিনটার দিকে শহরের টুপির মোড় এলাকার ৫৭ বছর বয়সী আবু হানিফ নামে সংকটাপন্ন এক রোগীকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। এসময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক শাতিল সাইমুম চৌধুরী রোগীটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় এ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় মারা যান ওই রোগী।
এসময় রোগীর সাথে থাকা পৌরসভার কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান চিকিৎসককে লাঞ্চিত করলে দায়িত্বরত ওয়ার্ড বয়রা বাঁধা দিলেও তাদের সাথেও অসদাচারণ করেন এবং এ্যাম্বুলেন্স চালক আনোয়ার হোসেনকে মারধোর করেন বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আবু আল হাজ্জাজ বলেন, ‘হার্টের জটিলতা নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিলো। ওই রোগীর চিকিৎসা দেয়ার মত ব্যবস্থা ছিলো না আমাদের হাসপাতালে। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাৎক্ষনিক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর প্রেরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
পরে রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় মারা যান ওই রোগী। কিন্তু চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে দায়িত্বরত চিকিৎসককে লাঞ্চিত করাসহ সরকারী কাজে বাঁধা দেন কাউন্সিলর।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নীলফামারী পৌরসভার কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহ বলেন, ‘আমার এলাকার রোগী ছিলেন আবু হানিফ। আমি সেখানে গিয়ে ডাক্তারকে বললে ডাক্তার রোগী দেখে রংপুরে রেফার্ড করে দেয়। স্বজনরা আধাঘন্টা আগে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু ঠিকমত চিকিৎসা না দেয়ার কারণে রোগীটির মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে গালাগাল করতে থাকে। পরে আমি নিজেই তাদের গালাগাল করতে মানা করি। আমার সাথে ডাক্তারের কোনো ঘটনা ঘটে নি। তবুও কেনো এমন হলো বুঝতে পারছি না।’
তবে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, ‘আবু হানিফার বুকে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু হাসপাতালে ইমার্জেন্সি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল স্টাফ কেউ গুরুত্ব সহকারে না দেখেই রোগীকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় ফেলে রাখে। পরে স্থানীয় জনগনের চাপে দায়িত্বরত চিকিৎসক দায়সাড়া ভাবে দেখে রংপুর রেফার্ড করে। রেফার্ডের কয়েক মিনিট পরই রোগী সেখানে মারা যায়।’
নিহত আবু হানিফার ছেলে মোঃ শামীম ইসলাম (২৭) বলেন, ‘বাবাকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার ২০-২৫ মিনিট পরেও ইমার্জেন্সি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল স্টাফ কেউ গুরুত্ব সহকারে দেখে না। আমরা ডাক্তারকে বার বার বলছি স্যার একটু তারাতারি দেখেন। এক পর্যায়ে প্রায় ৪০মিনিট অতিবাহিত হয় কিন্তু ডাক্তার ঠিকমত দেখে না। পরে বাধ্য হয়ে আমাদের কাউন্সিলর মাহাফুজ ভাইকে ডাক্তারকে রোগী দেখার কথা বললেও ডাক্তার নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাই মাহফুজ ভাই ডাক্তারের হাত ধরে আমার বাবার কাছে নিয়ে গিয়ে বলে দেখেন রোগীকে। এটাই আমাদের কাউন্সিলর ভাইয়ের অপরাধ হয়ে গেছে।
শামীম আরো বলেন,‘মাহফুজ ভাই বাবার কাছে ডাক্তারকে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে রংপুর রেফার্ড করে দেয়। রেফার্ড করার কয়েক মিনিট পর পরই আমি বুঝতে পারছি আমার বাবা আর নেই। তবুও ডাক্তাররা বলছে রংপুরে নিয়ে যান পরে তারা বলছে এম্বুলেন্সে উঠানোর সময় আমার বাবা মারা গেছেন। প্রায় দীর্ঘ ৪০ মিনিটি সময় সেখানে চিকিৎবিহিন অবস্থায় পড়েছিল আমার বাবা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরপরই আমার বাবাকে রংপুর রেফার্ড করে দিলে আজ বাবা হয়তো বেচে থাকতো। আমাদের এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কথা শুনে ছুটে এসেছেন কাউন্সিলর মাহফুজ ভাই। তার নামে যে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে সেটি আমরা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
তবে পৌরসভার কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহ এর নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া মামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় আহমেদ শরিফ স্বপন নামে এক ব্যাক্তি ফেইসবুকের একটি পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘কসাই নামক ডাক্তারের অবহেলার কারণে একটা জলজ্যান্ত মানুষ মারা গেল সেই খবর আছে কি? মৃত ব্যক্তি কাউন্সিলর মাহফুজের নির্বাচনি এলাকার বাসিন্দা। জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ববোধ থেকে সে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছে। এটা তার নৈতিক দায়িত্ব। সেজন্য যদি মামলা খেতে হয়ে তাহলে করার কিছু নেই।’
রবিন বসুনিয়া নামক এক ব্যক্তি ফেইসবুকে মন্তব্য করেছেন,‘ডাক্তার ও হাসপাতাল স্টাফদের অবহেলায় মৃত্যু দুঃখজনক। জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
জানতে চাইলে নীলফামারী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুর রউপ জানান, এ ঘটনায় নীলফামারী পৌরসভার ছয় নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান শাহকে আসামী করে মামলা করেছেন হাসপাতালের তত্বাবধায়ক। চিকিৎসককে লাঞ্চিত করা, সরকারী কাজে বাঁধা দানের অভিযোগ এনে দেয়া হয়েছে এই মামলা।
এআই