বরিশাল ব্যুরো
আগস্ট ২১, ২০২২, ০৭:১৮ পিএম
বরিশাল ব্যুরো
আগস্ট ২১, ২০২২, ০৭:১৮ পিএম
বাজার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নানা প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি বিশ্ব বাজারেও কমেছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংক। কিন্তু সুফল দেশের বাজারে নেই।
জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে এক সপ্তাহের ব্যবধান বরিশালে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। হঠাৎ করে দাম বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
সচেতন নাগরিকদের মতে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি করা কিছু জিনিসের দাম বাড়তে পারে। তবে দেশে যেসব পণ্যের উৎপাদন হয়, সেগুলোর দাম বাড়ার পেছনে কোনো যুক্তি নেই। নিত্যপণ্যের আমদানি ও বাজার দর নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবী জানান তারা। এদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান বরিশালের কর্মকর্তারা।
অপরদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত রমজান থেকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে। কার্ডধারীরা বলছেন, টিসিবি যেন চাল ও আলুও বিক্রি শুরু করে। তাছাড়া যে পরিমান সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর পরিমাণ যাতে বাড়ানো হয় সে দাবীও জানান কেউ কেউ। জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই বরিশালের বাজারে সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। রবিবার বরিশালের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে পিয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকা, যা ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ১০০ টাকার আদায় ১২০ টাকা, ৭০ টাকার দেশী রোশন ৮০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির মোটার ডাল ৭০ টাকা, ৮০ টাকার চিনি ৯০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৮ টাকা, সরিষা তেলে ৩৮ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা কেজি, চায়না রোশন ১০ টাকা বেড়ে ১২০টাকা, দেশি মুশুর ডাল ১৩০টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা, ৪২ টাকা কেজির খোলা আটা ৫০ টাকা, ৪৮ টাকার প্যাকেট আটা ৫৮ টাকা, ৬৫ টাকার ময়দা ৭০ টাকা, গুড়া দুধ কেজি প্রতি ৬০ টাকা বেড়ে ৭৬০টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ৫টাকা বেড়ে আলু প্রতি কেজি ২৫, শুকনা মরিচে কেজি প্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজির দাম অন্তত ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রবিবার বরিশালের বাজারে ৪৫ টাকার করল্লা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, ৫০ টাকার কাকরোল ৬০ টাকা, ৬০ টাকার বেগুন ৮০ টাকা, রেখা ৪০টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা, পেপে ২৫টাকা, পটল ৪০টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৬০টাকা, লাউ শাকের দুটি ডগা ৩০টাকা, পুইশাক কেজি ৪০ টাকা, লাশ শাক মুঠি ২০-৩০টাকা, ডাটা শাকের আঁটি ৪০টাকা, ঢেরশ ৪০ টাকা, পালং শাকের মুঠি ৩০টাকা, ধনেপাতা কেজি ১২০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ১৫-২০টাকা, লাউ আকার ভেঁদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বয়লার মুরগী ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লেয়ার ৩০০ টাকা এবং দেশী মুরগি ৫০০ টাকা কেজি। এছাড়া ডিমের দাম কিছুটা কমে এখন হালি বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করা হতো। মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারেও। গত সপ্তাহে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। এছাড়া ২৮০ টাকা ঢেলা মাছ ৩০০ টাকা, ২৫০ টাকার কাতল ৪০০ টাকা, ১৫০ টাকার তেলাপিয়া ১৮০-২০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, পোমা ৪০০-৫০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ২০০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকা, বড় চিংড়ি ১০০০-১২০০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এমন অজুহাতে প্রায় সব ধরণের চালে কেজি প্রতি ২-৫ টাকা বেড়েছে। ২৫ কেজি বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬৮০-১৭০০ টাকা। ২৮ বালাম ২৫ কেজির বস্তা ১৪০০ টাকা, স্বর্ণা ১৩৫০ টাকা, বুলেট বস্তা প্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে ২৫০০ টাকা এবং নাজিরশাইল বস্তা প্রতি ২০০ টাকা বেড়ে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর নতুন বাজারে আসা ক্রেতা মাইনুল বলেন, ‘এক মাস আগেও যে টাকা দিয়ে পুরো মাসের নিত্যপণ্যের বাজার চলেছে, এখন সেটা দিয়ে অর্ধেক মাস চলছে। কিছুদিন পর হয়তো সেই টাকা দিয়ে বাজার থেকে কয়েক পদের পণ্য কিনে ফিরতে হবে। এমন চলতে থাকলে একসময় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ পথে বসবে। না হয় বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে যেতে হবে।’
ক্রেতাদের দাবি, পণ্যের দাম বেড়ে যখন বাজারে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তখন কিছু অভিযান চলে। দু/চারজন বিক্রেতাকে মাঠপর্যায়ে জরিমানা করে দায়সারা কাজ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। স্কুল শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, যৌক্তিক কারণে যা বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতাকে তারা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন না থাকায় দিনে দিনে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বরিশালের সহকারী পরিচালক মো. শাহ্ শোয়াইব মিয়া বলেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত অভিযানে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হচ্ছে। তবে দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেটের ব্যাপারে সকলকে সচেতন হওয়ার কথা বলেন এ কর্মকর্তা।
আমারসংবাদ/এসএম