Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

তালতলীতে ছাত্রকে নির্মমভাবে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

আগস্ট ২৩, ২০২২, ০৮:২৭ পিএম


তালতলীতে ছাত্রকে নির্মমভাবে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল

কোচিং সেন্টারে বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করায় বরগুনার তালতলীতে এক স্কুলছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়েছেন প্রাইভেট শিক্ষক। পেটানোর ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এর প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টারে এ ঘটনাটি ঘটে। আহত স্কুলছাত্র আসাদ উপজেলার লাউপড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।

জানা যায়, উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টার নামের একটি কোচিং খোলেন স্থানীয় ছগির হোসেন। যার সরকারি কোনো অনুমতি নেই। সেখানে ঐ এলাকার লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণীর প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রীদের টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ানো হয়। এই কোচিং সেন্টারে আর কোনো শিক্ষক না থাকায় ছগির হোসেন একাই শিক্ষকতা করেন। মাঝেমধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে তার নিচের শ্রেণীর প্রাইভেট পড়ানো হয়। এই কোচিং সেন্টারে প্রায় দেড় মাস আগে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আসাদ কে মারধর করা হয়। মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরালের পরপরই সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। এই ভিডিও ভাইরালের পরপরই একের পর এক ছাত্র-ছাত্রীরা নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলছেন।

আহত স্কুলছাত্র আসাদ জানান, প্রায় দেড় মাস আগে আমার ক্লাসের এক বন্ধুর সাথে দুষ্টুমি করি। দুষ্টুমি করার পরে প্রাইভেট শিক্ষক ছগির স্যারের ভয়ে আমি তিন দিন যাবত কোচিং সেন্টারে যায়নি। তার পরে প্রাইভেটের বড় ভাইদের দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে একটি রুমে আটকানো হয়। এরপর ছগির স্যার ১০ টি বেত নিয়ে আসে। প্রায় আধাঘণ্টা যাবত আমাকে পেটাতে থাকে। আমি স্যার হাতে পায়ে ধরলেও আমাকে বেধড়ক মারধর করে। এই আধাঘণ্টায় ৭টি বেত ভেঙ্গে ফেলেছেন। বেধড়ক মারধর করায় আমি অজ্ঞান হয় পড়লে ছেড়ে দেয় ও একটি রুমে আটকে রাখে। জ্ঞান ফিরলে আমাকে আবারও মারধরের ভয় দেখানো হয় যাতে এই বিষয়টি কাউকে না বলি। পরে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে আমাকে ঔষধ কিনে দেওয়া হয়। আমি স্যারের ভয়ে এতদিন মুখ খুলিনি, তারপর দেখি একটি ভিডিও ভাইরাল হইয়াছে । ভিডিওটি দেখে আমি নিজেও অবাক হয়ে গেছি।

নাম প্রকাশের একাধিক কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের কারণে অকারণে এভাবেই নির্যাতন করা হইতো। ছগির স্যারের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে সাহস পাইনি।

সাকসেস কোচিং সেন্টারের মালিক ও শিক্ষক ছগির হোসেন বলেন, ঔ ছাত্র দুষ্টুমি করার পরে আমি বেত দিয়ে ৪০টি পিটান দিছি। সেটা কে বা কারা ভিডিও করেছে তা আমি দেখিনি। ভাই এ বিষয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) নিউজ করার কোন দরকার নেই। আপনাদের সাথে তালতলী এসে দেখা করব। 
লাউপড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী বলেন,ওই কোচিং সেন্টারে আমার এই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আসাদকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। ভিডিওতে যেভাবে দেখেছি তাতে গরুকেও মানুষ এভাবে পেটায় না। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম সাদিক তানভীর বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমিও দেখেছি খুবই দুঃখজনক বিষয় পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধের ভিতরেও পড়ে। সে ক্ষেত্রে থানায় ওই ছাত্রের অভিভাবকরা মামলা করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন কোচিং সেন্টার অবৈধ। ওই অভিযুক্ত সগীরের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি পাশাপাশি নোটিশও করাবো। বর্তমানে ওই শিক্ষক পলাতক আছেন। বের হলে ও কোচিং সেন্টার খোলা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমারসংবাদ/এসএম

Link copied!