Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

গুরুদাসপুরে এক যুবকের সংগ্রহশালা

মোঃ আব্দুস সালাম, গুরুদাসপুর (নাটোর)

মোঃ আব্দুস সালাম, গুরুদাসপুর (নাটোর)

আগস্ট ২৮, ২০২২, ০৩:৫০ পিএম


গুরুদাসপুরে এক যুবকের সংগ্রহশালা

নাটোর বনলতা সেনের রাজ্যে রয়েছে প্রাচীনকালের অনেক ঐতিহ্য। বনলতা সেনের রাজ্যর গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় তালুকদার পাড়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে প্রীতম-প্রীয়ান্তী সংগ্রহশালা ‍‍`জাদুঘর‍‍`।

এ সংগ্রহশালায় প্রাচীনকালের বেশকিছু  পিতলের পাত্রে ভরা ধনদৌলত। সেগুলো পাহারা দিচ্ছে দুটি বিষধর সাপ। লোভে পরে কেউ হাত বাড়ালে আর রক্ষা নেই। কল্পকাহিনির অনুকরণেই সাজানো এই সংগ্রহশালা।সেটার নাম দেওয়া হয়েছে রত্নভান্ডার।

এছাড়াও প্রাচীনকালের নানা দূর্লভ অনেক জিনিসের সংগ্রহ রয়েছে সেখানে। আছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধাতব মুদ্রা সহ ১৮১ দেশের মুদ্রা, ১৩০বছর আগের কাঠের খড়ম, ১৭০ বছর আগের কাঠের ঢেঁকি, ১৯০ বছর আগের রুপার তৈরি মাজার বিছা,সোনার চামচ,৮০ বছর আগের কলের গানসহ প্রায় ২ হাজার প্রাচীন নিদর্শন। এসব কিছুই দেখা যাবে প্রীতম-প্রীয়ান্তী সংগ্রহশালায়। শখের বসে এমন প্রাচীন ও দুর্লভ জিনিসের সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন মো. আবুল কালাম আজাদ তালুকদার।

আজাদের বাড়ির সামনের অংশের আঙিনা জুড়ে সেমিপাকা টিনের ঘরে জায়গা হয়েছে এসব সংগ্রহের। সেই ঘর ছাড়াও লম্বা বারান্দায় সাজানো রয়েছে নিদর্শনগুলো। কক্ষে ঢুকতেই দেখা গেল রত্নভান্ডারটি।

প্লাষ্টিকের জন্ত্র দিয়ে তৈরি চিড়িয়াখানা, পোকামাকড়ের, ঘরবসতি, ২টাকার নোট দিয়ে তৈরি পোশাক, কাঁশা-পিতল, কড়ি, ঝিনুক ও ১শ বছর আগের হাতির দাঁতের তৈরি শোপিস দেখা গেল এদিক-ওদিক। বারান্দায় রয়েছে প্রাচীন সব নিদর্শন। কাচে ঢাকা না থাকায় ধুলার আস্তরণ অনেক নিদর্শনে। তবে কিছু কাচের ফ্রেমেও রাখা আছে।

গত ২৬ আগষ্ট শুক্রবার এই সংগ্রহশালায় দেখা যায়,পাবনার চাটমোহর থেকে চলনবিলে বনভোজনে আসা একটি দল সংগ্রহশালা দেখতে এসেছেন।

সেই দলেরই পাবনা এ্যাডোওয়াড কলেজের শিক্ষার্থী রোজিনা খাতুন বলেন,স্থানীয় লোকের মুখে শুনেই আমরা এখানে এসেছি। সংগ্রহ দেখে অনেক কিছুই দেখার ও জানার রয়েছে।প্রাচীনকালের ঐতিহ্য সংগ্রহ দেখে অনেক কিছু জানতে পারলাম একদম ছোটবেলা দাদীর কাছে শোনা গল্পের সাথে মিলে গেলো।

সংগ্রহশালাটি পুরাতন টিনের ঘরে রয়েছে, সেটা সংরক্ষিত নয়।পুরাতন এসকল জিনিস পত্র সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ চেয়েছেন তিনি।

সংগ্রাহক আবুল কালাম আজাদ তালুকদার জানালেন, প্রায় ২৭ বছর ধরে এসব সংগ্রহ করছেন। শুরুর দিকে সংরক্ষন করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। রাখাও ছিল এলোমেলোভাবে। তাঁর স্ত্রী জেসমীন সুলতানা এ কাজে দারুণভাবে সহযোগিতা করছেন।
দেশ ও বিদেশের এসব উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষনের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যায় হয়েছে বলেও জানালেন আজাদ।

তিনি এখনো সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহযোগিতা পাননি তিনি।একটু সরকারি সুবিধা পেলে জাদুঘরটি সংরক্ষণ সহ আরো সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব হতো বলে তিনি জানান।

সংগ্রহশালাটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়, সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার। সকাল ৯টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে সংগ্রহশালাটি।

অন্য দিনগুলোতে কেন নয়? আজাদ বলেন, পেশাগত কারণে সময় দিতে পারি না। যেহেতু সংগ্রহশালাটি বাসায়, তাই প্রতিদিন খোলা রাখা সম্ভব হয় না। তবে শুক্রবার প্রায় ২০০-৩০০ জন দর্শনার্থী আসেন।

সংগ্রহশালার মালিক আজাদের শুরু ১৯৯৪ সাল। অফুরন্ত সময়। সচ্ছল পরিবার। ছাত্র জীবন থেকেই আজাদ পরিচিত মানুষতো বটেই উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন জেলা বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ শুরু করেন।

আজাদের বাবা আয়নাল হক তালুকদার বলেন, আজাদের এসব দূর্লভ নিদর্শন সংগ্রহ দেখে প্রথম দিকে হিয়ালিপনা মনে হতো। আমরা সবাই তাকে পাগল বলতাম। অনেক টাকা খরচ করে এমন কাজ কে করে বলেন?তবে এখন আজাদের এই সংগ্রহশালা নিয়ে আমরা গর্ব করি।

গুরুদাসুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। কেননা এখন আর কেউ এরকম প্রাচীন সামগ্রী সংগ্রহ করে না। আজাদের সংগ্রহশালাটি আমি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি। অনেক সংগ্রহ রয়েছে আজাদের সংগ্রহ শালায়।

Link copied!