নীলফামারী প্রতিনিধি
আগস্ট ২৮, ২০২২, ০৭:০৯ পিএম
নীলফামারী প্রতিনিধি
আগস্ট ২৮, ২০২২, ০৭:০৯ পিএম
নীলফামারীর ডোমারে পুত্রবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরের বিরুদ্ধে। ওই পুত্রবধূর বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী ডিমলা উপজেলায়। ঘটনাটি ফাঁস করায় বিচারের পরিবর্তে উল্টো বেধড়ক মারপিটসহ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ওই নারী নিজেই। পরে ওই পুত্রবধূ বাদি হয়ে শ্বশুরসহ চারজনকে আসামি ডোমার থানায় একটি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর পূর্বে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা গয়াবাড়ি ইউনিয়নের এক বাসিন্দার মেয়ের (১৯) সাথে পার্শ্ববর্তী ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মৌজা পাঙ্গার লালাপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলামের ছেলে সাজু ইসলামের (২৩) পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর কয়েক মাস তাদের দাম্পত্য জীবন ভালো চললেও লম্পট শ্বশুরের কু-দৃষ্টি পড়ে পুত্রবধূর দিকে।সুযোগ পেলেই শ্বশুর বাজে ইশারা-ইঙ্গিত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিতেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩রা জুলাই দিবাগত রাত ৮টার সময় ওই বধূর স্বামী ব্যবসা পরিচালনার জন্য ডিমলায় থাকায় ও শাশুড়ি প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ায় শ্বশুর ও পুত্রবধূ শুধু বাড়িতে ছিলেন।
বাড়িতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগে শ্বশুর রবিউল ইসলাম তার শয়ন ঘরে মাথা ব্যথায় কাতরানোর ভান করে পুত্রবধূর কাছে কৌশলে তার মাথা টিপে চায়।পুত্রবধূ সহজ-সরল মনে পিতা সমতুল্য শ্বশুরের ঘরে গিয়ে তার মাথা টিপে দিতে থাকার এক পর্যায়ে লম্পট শ্বশুর রবিউল ইসলাম পুত্রবধূর মুখ চেপে ধরে বিছানায় জোর পূর্বক শোয়ায়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই পুত্রবধূ তার শ্বশুরকে কোনো রকমে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে ইজ্জত রক্ষা করেন।
কিছুক্ষণ পর তার শাশুড়ি ও স্বামী বাড়িতে ফিরলে তাদের বিষয়টি খুলে বললেও তারা তা কর্ণপাত করেননি।পরে ভুক্তভোগী গৃহবধূ তার মা-বাবাসহ পরিবারকে বিষয়টি জানালে তার পরিবারের লোকেরা ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, নাউতারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ডোমারের পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করেন। এতে শ্বশুর রবিউল ইসলাম(৫০), শাশুড়ি ছাবিনা বেগম (৪৫), স্বামী সাজু ইসলাম (২৩) ও ননদের স্বামী ছামুন ইসলাম (৩০) ওই গৃহবধূর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৩ জুলাই দুপুরে তাকে ব্যাপক মারপিট করাসহ অমানবিক নির্যাতন করে বাড়ির বাহিরে বের করে দেয়।
এ ঘটনা দেখে এলাকার মানুষজন ভুক্তভোগী ওই বধূর বাবার পরিবারে খবর দিলে তার পরিবারের লোকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে ডিমলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।পরে তার অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ(রমেক)হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ফিরে ওই পুত্রবধূ লম্পট শ্বশুর ও স্বামীসহ ওই চারজনকে আসামি করে ডোমার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নম্বর-০৭,তারিখ ১৫/৮/২০২২ইং দায়ের করেন।
এ ঘটনায় ডোমার থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার দুই নম্বর আসামি ওই গৃহবধূর স্বামী সাজু ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছিলেন।
নির্যাতিতা ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, বিয়ের কয়েক মাস পরেই আমার দিকে কু-নজর পড়ে লম্পট শ্বশুরের।প্রায় সময় তিনি আমাকে বিরক্ত করায় আমি তার মেয়ের মত এ কথা শ্বশুরকে বলে অনেক বার তাকে সাবধান করার পাশাপাশি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিষয়টি জানিয়েছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
তারা আমার গর্ভের প্রথম সন্তানও নষ্ট করিয়েছেন।আমার সাথে এত অন্যায় করেও তারা মামলার দশদিন না হতেই গত ২৪ আগস্ট কারাগারে থাকা আমার স্বামী নিম্ন আদালত থেকে ও অপর তিন আসামি উচ্চ আদালতে থেকে জামিন নিয়ে এসে উল্টো আমাকেই মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে! আমার সাথে কেনো এত বড় অন্যায় করা হলো আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।যাতে করে আর কোনো শ্বশুর তার মেয়ে সমতুল্য পুত্রবধূর সাথে এমনটা করার দুঃসাহস না দেখায়।
ভুক্তভোগী নারীর মা ও বাবা বলেন, আমাদের মেয়ের জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে ওরা আমরা জড়িতদের শাস্তি চাই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শ্বশুর রবিউল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। নাউতারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ মনি বলেন, ধর্ষণ চেষ্টা অভিযোগের বিষয়টি আমার এখতিয়ারের বাইরে হওয়ায় আমি ভুক্তভোগীকে আইনি সহায়তা নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল আউয়াল বলেন, চার আসামির মধ্যে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত আসামি নিম্ন আদালতে জামিন পেয়েছেন ও পলাতক তিন আসামি উচ্চ আদালতে ছয় সপ্তাহের জামিন নিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত চলমান।তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।তবে মামলাটি তদন্তাধীন থাকায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন-নবী।
এসএম