Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ইমামের ধর্ষণে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী যুবতী, মামলা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২, ০৪:৫৮ পিএম


ইমামের ধর্ষণে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী যুবতী, মামলা

নেত্রকোনার বারহাট্টায় স্বামী পরিত্যক্তা এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ধর্ষণে ওই যুবতী সাতমাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বারহাট্টার থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে রোববার বিকেলে ভুক্তভোগী অন্তঃস্বত্তা যুবতী বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

অভিযুক্ত ইমামের নাম হাফেজ নুর আহম্মদ (৫৭)। তিনি উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের মৃত মগল মিয়ার ছেলে। আর ওই ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী যুবতী একই গ্রামের। তবে মামলার খবর পেয়েই গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হাফেজ নুর আহম্মদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শানারপার এলাকায় বসবাস করেন। মাঝে মধ্যে নিজ বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টার মল্লিকপুরে তার মা বসবাস করেন। মাকে দেখতে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসেন তিনি।  চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাড়িতে এসে পাশের বাড়ির স্বামী পরিত্যক্তা এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওই যুবতীকে বিভিন্ন কাজের বাহানায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে ওই যুবতী সাতমাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েন। এরআগেও এই ধরণের বেশ কয়েকটি অপকর্ম তিনি করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে,  হাফেজ নুর আহম্মদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রীকে রেখে একাই গ্রামের বাড়ি মল্লিকপুরে আসেন। এ সময় নদী খননের বালু তোলে বিক্রি করেন। পরে পাড়ার মসজিদে রমজানে নামায পড়ান। এ সময় বেশ কিছুদিন এলাকায় থাকেন। সেই সময় নানা কাজের জন্য পাশের বাড়ির স্বামী পরিতক্ত্যা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওই যুবতীকে ডেকে আনেন বারবার। এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করেন নুর আহম্মদ। এ কথা কাউকে না বলতে হুমকি দেন। এছাড়া ওই যুবতীকে নানা লোভ লালসাও দেখান নুর আহম্মদ। যুবতী বর্তমানে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি নুর আহম্মদকে জানালে প্রতিবেশী কয়েকজনকে দিয়ে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার পরামর্শ দেন। এমনকি এই বাচ্চা তার নয় বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক মেম্বার রিয়াজ উদ্দিন জানান, নুর আহম্মদ একজন লম্পট টাইপের লোক। আগে একবার গ্রামের মসজিদে ইমাম থাকা অবস্থায় এক নারীর সঙ্গে এমন কাজ করে। সেই নারী অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়লে ঘটনা জেনে এলাকাবাসী তাকে মারধর করে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। পরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ চলে যায়। সেখানে গিয়েও একই কাজ করে। পরে কয়েক মাসের অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় সেই মেয়েকে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ী হয়। একবার মালেয়শিয়া গিয়ে কিছুদিন থেকেছে। আমিসহ অনেক মানুষকে অবৈধভাবে সে মালেয়শিয়া নিয়েছে। তারপর দেশে এসে আদম ব্যবসা শুরু করেছে। এছাড়া নারী সংক্রান্ত কেলেংকারি সে ৬-৭টা করেছে।

উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার লালন বখত মজুমদার বলেন, নুর আহম্মদ ইমামতি করলেও তার নারী কেলেংকারির অনেক ঘটনা আছে। বর্তমানে বিদেশে লোক পাঠায়, আদম ব্যবসাও করে। এই প্রতিবন্ধী যুবতীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিয়ে করার কথা বললেও সে নানা চলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় কিছু লোকজনকে টাকা পয়সা দিয়ে প্রতিবন্ধী যুবতীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ ঘটনায় তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।

ভুক্তভোগীর মা জানায়, প্রথমে নুর আহম্মদকে আমি ঘটনা ফোনে জানাই। জানানোর পর এটি সমাধানে আমাকে আমাকে আশ্বাসও দেয়। কিন্তু কয়দিন যেতেই এলাকার কয়েকজন মানুষেকে টাকা পয়সা দিয়ে মানেজ করে আমাকে আর আমার মেয়েকে অপবাদ দিতে শুরু করে। তারা বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চাপ দেয়, ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে। শেষে বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমার ৭ সন্তানের মধ্যে ৫জনই প্রতিবন্ধী। স্বামী মারা যাওয়ার পর এদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। এ ঘটনার বিচার চাই।

মল্লিকপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, নুর আহম্মদ এমন ঘটনা কতগুলো যে ঘটিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। টাকা পয়সা খরচ করে আগের সব ঘটনা থেকে রেহাই পেয়েছে। এবার প্রতিবন্ধী মেয়েটার সর্বনাশ করল। এ ঘটনার কঠোর সাজা দাবি করছি।

অভিযুক্ত নুর আহম্মদ এ ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় আমার কোন হাত নেই। অকারণে আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। ঘটনা চেপে যাওয়ার জন্য এই প্রতিবেদককে আর্থিক প্রলোভন দেখান।

বারহাট্টা থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ওই মেয়ে সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা প্রমাণিত হয়েছে। মামলা হওয়ার পর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে গা ঢাকা দেওয়ায় তাকে ধরা যায়নি। গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

কেএস

Link copied!