Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

সিলেট-আখাউড়া রেলপথের শমশেরনগর

সিন্ডিকেট চক্রে জিম্মি রেল যাত্রীরা

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২, ১১:৪৭ এএম


সিন্ডিকেট চক্রে জিম্মি রেল যাত্রীরা
স্টেশনের পয়েন্টসম্যান কাটছেন টিকিট

সিলেট-আখাউড়া রেলপথের “শমশেরনগর” স্টেশনে সিন্ডিকেট চক্রের রমরমা টিকেট বাণিজ্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন অসহায় ট্রেন যাত্রীরা। চাইলেই টিকেট নাই আবার বাড়তি টাকা দিলে পাওয়া যায় কাঙ্খিত সেই টিকেট। এই বাড়তির বিনিময়ে আশ পাশের স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহ করে এনে দেওয়া দায়িত্বশীলদের প্রাত্যহিক কাজে পরিণত হয়েছে। সাথে রেলওয়ের সরকারি সম্পদ থেকে ভাড়া খাওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এছাড়া স্টেশনের পয়েন্টসম্যান সাকিব কম্পিউটার থেকে কাটে একের পর এক টিকেট।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার “শমশেরনগর” গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ। প্রতিবেশি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ নানান প্রয়োজনে শমশেরনগরের উপর নির্ভরশীল। বিশেষকরে রেল সেবার জন্য শমশেরনগর ই তাদের একমাত্র ভরসা। তৎকালীন বৃটিশ আমলে নির্মিত “শমশেরনগর” রেলওয়ে স্টেশনে বর্তমানে সিলেট-ঢাকা পথে আন্তনগর উপবন এক্সপ্রেস ও কালনী এক্সপ্রেস এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রেল পথে চলাচলকারি আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপেজ (যাত্রা বিরতি) রয়েছে। এর মাঝে ঢাকাগামি উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন চেয়ার ১০টি, প্রথম শ্রেণি এসি চেয়ার ৩টি, কালনী এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ার ১৩টি, প্রথম শ্রেণি এসি চেয়ার ৩টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ার ১০টি ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের ৭টি শোভন চেয়ারের টিকেট শমশেরনগরের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। তবে বরাদ্দকৃত এসব টিকেটের বিপরীতে যাত্রী হয় কয়েকগুণ। ফলে যাত্রী চাপের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শমশেরনগর রেল স্টেশনের মাস্টার জামাল উদ্দিন ও সহকারি স্টেশন মাস্টার উত্তম কুমার দেব জনি এবং পিম্যান (অস্থায়ী পয়েন্টস ম্যান) সাকিবসহ অন্যান্যরা প্রকাশ্যে টিকেট বাণিজ্যে জড়িত। সহকারি স্টেশন মাস্টার উত্তম কুমার দেব জনি পরিবারের লোকজনসহ তার শ্বশুর, শাশুড়ীর নামে একাউন্ট তৈরী করে টিকেট কেটে রাখেন। যাহা পরে বাড়তি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন জানিয়ে স্টেশনের আশ পাশের রেলওয়ের সম্পত্তি অবৈধ ব্যবহারকারিদের কাছ থেকেও মাস্টাররা মাসোয়ারা নেওয়া হয় বলে রেলওয়ের বিশ্বস্ত সূত্র আরও জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা জানান, স্টেশন মাস্টারদের বাড়তি টাকা দিলে শ্রীমঙ্গল, শায়েস্তাগঞ্জ, কুলাউড়া ও সিলেট থেকে টিকেট এনে দেন। সহকারি মাস্টার উত্তম কুমারের ডান হাত বলে পরিচিত পি ম্যান (অস্থায়ী পয়েন্ট ম্যান) সাকিবসহ স্টেশনের অন্যান্য রেল কর্মচারিদের নিকট বাড়তি টাকার বিনিময়ে টিকেট পাওয়া যায় প্রতিদিন ই। পয়েন্টসম্যান সাকিব কম্পিউটার থেকে একের পর এক টিকেট কাটে কি ভাবে? তার ডিউটি কি কম্পিউটার অপারেটর? বলেও প্রশ্ন তোলেন তারা।

বিষয়টির ব্যাপারে সরকার দলীয় সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ স্তানীয়রা বলেন, এরা সীমা ছাড়িয়ে গেছে বহু আগেই। এদের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি নস্ট হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে টিকেট বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি বলে তারা আরোও জানান।

স্টেশন রোডের ব্যবসায়ি দুরুদ আলী বলেন, স্টেশনের লিডারদের পিছনে হেঁটে তিনগুণ দাম দিয়ে টিকেট ক্রয় করতে হয়।

বাবুল ওরফে পিচ্চি বাবুল নামীয় যাত্রী বলেন, শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার উত্তম এর কাছে গেলেই বলে টিকেট নাই। সকালে আসেন। সকালে গেলে বাড়তি টাকার বিনিময়ে ট্রেনের টিকেট মিলে। অতিরিক্ত টাকার বিষয়ে উত্তম মাস্টার বলে ম্যানেজ করে টিকেট দিয়েছি।

শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্টেশন মাস্টার জামাল উদ্দিনকে স্টেশনে এমনকি ফোনেও পাওয়া যায় না। ঘন্টার পর ঘন্টা মাল গাড়ী পড়ে থাকতে দেখা যায় স্টেশনে কিন্ত সে উধাও হয়ে যায়। আর টিকেটের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নাই। টিকেট বাণিজ্যে স্টেশনের সবাই জড়িত।  

অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে সহকারি স্টেশন মাস্টার উত্তম কুমার দেব জনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সিন্ডিকেট চক্রে টিকেট বাণিজ্য ও রেল সম্পত্তি থেকে ভাড়া নেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে জানতে শমশেরনগর স্টেশন মাস্টার জামাল উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের ডিসিও (ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার, ঢাকা) মোহাম্মদ শাহ আলম এর সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিক দিন কয়েকদফা চেস্টা করে রিং বাজলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে চেস্টা করে রিং বাজলেও ডিসিও ফোন কল ধরেন নাই।

কেএস 

Link copied!