Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

কুষ্টিয়ায় সেতুর সংযোগ সড়ক কেটে ঠিকাদার লাপাত্তা

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২, ০৪:০৪ পিএম


কুষ্টিয়ায় সেতুর সংযোগ সড়ক কেটে ঠিকাদার লাপাত্তা

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সেতু পুনর্র্নিমাণের জন্য পুরোনো সেতুর দু’পাশে সড়ক কেটে রেখেছেন ঠিকাদার। চলাচলের জন্য খালের ওপর বিকল্প জরাজীর্ণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে নেই কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। নেই সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। এভাবে প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হলেও দেখা মিলেছে না সেতু নির্মাণকাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। প্রকৌশলী বলছেন, কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই।

জরাজীর্ণ বিকল্প সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যানবাহন উল্টে পড়ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। আহত হচ্ছেন পথচারীরা। নষ্ট হচ্ছে যানবাহন ও পরিবহনের মালামাল। ফলে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এমন চিত্র দেখা যায় উপজেলার পান্টি-বাঁশগ্রাম বাজার সড়কের চাঁদপুর ইউনিয়নের মহানগর পূর্বপাড়ায় তিন রাস্তা মোড় এলাকায়।

পথচারীদের অভিযোগ, প্রায় ছয় মাস আগে নতুন সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে সেতুটির দুপাশের সড়ক কেটে দিয়ে পালিয়েছেন ঠিকাদার। চলাচলের জন্য খালের ভেতর দিয়ে জরাজীর্ণ বিকল্প সড়ক তৈরি করা হয়েছে। সেই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে প্রতিনিয়ত মানুষ দুর্ঘটনা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সেতু এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর দু’পাশের পাকা সংযোগ সড়ক কাটা রয়েছে। সেখানে নেই কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। নেই কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। সেতুর পাশে খালের ওপর মূল সড়ক থেকে অনেক নিচু জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে বিকল্প সড়ক। যানবাহন থেকে যাত্রীরা নেমে হেঁটে পার হচ্ছে। আর যানবাহনগুলো পথচারীরা ও যাত্রীরা ঠেলে ওপরে তুলছেন। ভারী মালবাহী যানবাহন প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের চাঁদপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার সড়ক দিয়ে চলাচল করছে।

সেতুটির পাশের মুদিদোকানি সজল বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিদিনই গাড়ি উল্টে অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনা) হচ্ছে। দোকান ফেলে বারবার ছুটে যায় গাড়ি ঠেলতে। মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। দ্রুত সমস্যাটির সমাধান হওয়া দরকার।’

ইজিবাইকের চালক রহমত আলী বলেন, ‘রাস্তাটি খুব ব্যস্ত। ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চলে। খালের ওপর রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। যাত্রীদের নামিয়ে আবার যাত্রী দিয়েই ধাক্কা দিয়ে গাড়ি পার করতে হয়। গাড়ি উল্টে প্রায় সময়ই আহত হচ্ছে অনেক মানুষ।’

বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামের পেঁয়াজের ব্যবসায়ী রিপন আলী বলেন, ‘মালবোঝায় গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই। রাতে মানুষ গাড়ি নিয়ে গর্তে পড়ে যায়। সাত থেকে আট মাস ধরে এই দুর্ভোগ। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।’

জানা যায়, উপজেলার পান্টি, চাঁদপুর ও বাগুলাট ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষ এই রাস্তায় চলাচল করে। এ ছাড়া পাশের ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা ও মাগুরা জেলার মানুষ কুষ্টিয়া শহরে যাওয়া আসা করে এ সড়ক দিয়ে।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজের ঠিকাদার জেলার মিরপুরের রিপন আলী। নির্মাণকাজের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। দৃশ্যমান কাজ না থাকায় বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার প্রকৌশলীকে না জানিয়ে সড়ক কেটে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার রিপন আলীকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘রিপন ভাই আমার শ্রমিকদের দিয়ে সেতুর রাস্তা ভাঙার কাজ করেছিল। কিন্তু কবে কাজ করবেন তা জানি না। যত দূর জানি, কাজের মেয়াদ নেই।

চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, সেতুর নামে খোঁজ নেই, রাস্তা কেটে উধাও ঠিকাদার। জনগণের কষ্টের শেষ নেই।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। কাজ বাতিলের জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার আমাদের না জানিয়ে রাতের আঁধারে সড়ক কেটে পালিয়েছেন। সেখানকার জনদুর্ভোগের বিষয় ইউএনও স্যার ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কাটা সড়ক সংস্কার করে চলাচল স্বাভাবিক করতে।’

কেএস 
 

Link copied!