Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪,

মানবিকতার শীর্ষে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন

মামুনুর রশিদ, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

মামুনুর রশিদ, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২, ০৪:২৫ পিএম


মানবিকতার শীর্ষে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বিভিন্ন বিষয়ে মানবিকতার দায়িত্ব পালন করে মানবিকতার শীর্ষে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মাইন উদ্দিন। তিনি হঠাৎ করে অসহায় এতিম শিশুদের খোঁজখবর নিতে চলে গেলেন ত্রিশালের দরিরামপুরে অবস্থিত স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশন নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। খোঁজ নেন শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের। সকলকে খাওয়ালেন মিষ্টি।

ওসি মাইন উদ্দিন বলেন, গত ১ সপ্তাহ পূর্বে স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশনের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি দরিরামপুরের বালিপাড়া রোড এলাকায়  বিনা পয়সায় লেখাপড়া সহ শিশুদের সকল বিষয়ে সহযোগিতা করছে স্মাইলিং বেবী ফাউন্ডেশন নামক একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অনাথ এতিম। এদেরকে বিনাখরতে লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে সকল শিক্ষার্থীকে ভালমানের খাবার ও ওষুধপত্র দিচ্ছে।  

উল্ল্যেখ্য, এখানে কিছু শ্রমিক দিয়ে পাটের তৈরি বিভিন্ন প্রকার ব্যাক তৈরি করা হচ্ছে। ঐ ব্যাগগুলো অষ্ট্রিলিয়ায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ এবং শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানে সিলিং ফ্যান সংকট থাকায় ওসি মাইন উদ্দিন শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক ৩টি বিদ্যুতিক পাখা কিনে দেন।

স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অষ্ট্রিলিয়া প্রবাসী এম এ এরফান বলেন, আমি নিজের সন্তানের কথা ভেবে সব সময় অসহায় দুস্ত শিশুদের মাঝে পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। ১৫ আগস্ট নিজেরা রান্না করে সরষে ইলিশ মাছ সহ উন্নত মানের খাবার বিতরণ করি শিক্ষার্থীদের মাঝে।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার সুযোগ্য অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দিন ত্রিশালে গত-২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে যোগদান করেন। তিনি ভালুকায় থাকাকালীন সময়ে তার মানবিকতার কথা লোকমুখে ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারলেও এখন তার বাস্তবতা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়েছে।

জানা যায়, ভালুকা উপজেলায় যোগদানের শুরু থেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ওসি মাইন উদ্দিন। নিজ হাতে কোয়ারেন্টিনে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। পথহারা চার শিশুকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। উথুরা ইউনিয়নের হতিবেড় এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় কেনা বৃদ্ধার বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করে তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

বহুলীতে পরিত্যক্ত বারান্দায় প্রসব করা সন্তানসহ মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ তাঁর ঠিকানা বের করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এভাবেই তিনি ভালুকায় দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে সব সময় অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করেন, যার কারণে ভালুকার সাংবাদিকসহ সচেতন মহল এখনও এই মানবিক ওসি মাইন উদ্দিন কে মনে রেখেছে।

পুলিশের পোশাকের বাহিরে তিনি একজন সাদা মনের মানবিক অফিসার সর্বদাই  খুঁজে বেড়ায় সমাজের অসহায় অবহেলিত মানুষগুলোকে।
পূর্বের ধারাবাহিকতায় পুনরায় তিনি ত্রিশালে যোগদানের কয়েক দিনের পর থেকেই মানবিকতার পরিচয় দিলেন (ওসি) মাইন উদ্দিন। অসহায়ত্ব আর দরিদ্রতার ছোবলে আক্রান্ত হয়ে মৃত প্রায় ক্ষত-বিক্ষত দেহাবশেষ বাচিয়ে রাখার তাগিদে ক্ষুধা নিবারণ কিংবা সংসারের হাল ধরার দায়িত্ব থেকে পিছু না হটা এক পথশিশুর পাশে  দাঁড়ান  তিনি।

গত (৩১জুলাই) শনিবার ভাগ্য বিড়ম্বনায় সাহায্যের আশায় ভয়ে-ভয়ে শক্ত ভারী কাঠের ক্রেচারে ভর করে থানার গোলঘরে উপস্থিত হয় ছেলেটি। সেখানে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকদের সাথে বসে ছিলেন ওসি মাইন উদ্দিন। শিশুটিকে দেখে আঁতকে উঠেন ওসি। কাছে ডেকে নিয়ে জানতে চাইলেন কিভাবে কি হয়েছিল, পরিবারে কে কে আছেন?

উত্তরে জানায়, সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারাবার পর পিতার মৃত্যু। বিশ্ব সংসারে বেঁচে থাকার অবলম্বন মা আর বড় তিন বোনকে নিয়ে তার অস্বচ্ছল সংসারের করুন কাহিনী। কাঠের ক্রেচার আর ক্ষত চিহ্নগুলো অনেক ভারী তার জীবন চলার পথে।

ওসি মাইন উদ্দিন কিংকর্তব্যবিমুর খানিকক্ষন নিশ্চুপ থেকে পকেট টাকা বের করে দিয়ে বললেন -“এটা দিয়ে তো তোর অনেক কষ্ট হয় ” আমি তোর জন্যে হালকা দেখে এ্যালোমিনিয়ামের একটা ক্রেচার আনিয়ে রাখবো তুই আগামীকাল এসে নিয়ে যাবি।

এভাবেই সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য নিরবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে থাকেন ত্রিশালের মানবিক ওসি মাইন উদ্দিন। হয়ত আপনাদের মনে হতে পারে কেন বারবার উনার মানবিকতা নিয়ে লেখি? উত্তর আপনারা যা ভাবছেন তা হয়তো না। আমরা চাই এভাবে সবাই এগিয়ে আসুক সমাজের অবহেলিতদের পাশে। আরো উৎসাহী হক ভালকিছুর দিকে। অস্থায়ী এই জীবনে রেখে যাক কিছু স্থায়ী ভাল কাজ আর ভালবাসা। এভাবেই তিনি একেরপর এক ত্রিশাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।

জয় করে নিয়েছেন ত্রিশাল উপজেলার রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলের নেতাদের মন। তিনি নিজে একেবারে জনগণের কাছে গিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে তার অফিসরুমে না বসে ত্রিশাল থানা চত্বরে জনগনের জন্য গেইটের পাশে নির্মিত গোলচত্বরে বসে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

তিনি তার উপরে অর্পিত সরকারী দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের পাশাপাশি নামাজের সুবিধার্থে গোলচত্বরের পাশেই নির্মাণ করেছে ভাল মানের একটি মসজিদ। মসজিদ টিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে উপস্থিত হচ্ছে আশপাশের মুসুল্লিরা।

ত্রিশাল থানার ওসি মাইনুদ্দিন তার দক্ষ পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা ছাড়াই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।  রাস্তায় নেই কোন যানজট, ত্রিশাল থেকে ভালুকা থেকে  ময়মনসিংহ এবং ত্রিশালটু বালিপারড়া হয়ে নান্দাইল চলাফেরা করতে বিভিন্ন যানবাহন।

Link copied!