নেত্রকোনা প্রতিনিধি
অক্টোবর ৩, ২০২২, ০৯:১১ পিএম
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
অক্টোবর ৩, ২০২২, ০৯:১১ পিএম
নেত্রকোনায় স্বামীর দায়ের কুপে স্ত্রী নাসরিন আক্তার (৩০) গুরুতর জখম হয়েছেন। তার পিঠে দায়ের কুপের গভীর ক্ষত রয়েছে। এছাড়া শরীরে ও মুখে শরীরে অসংখ্য কুপের দাগ রয়েছে।
সোমবার (৩ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ভোরে সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পরে প্রতিবেশীরা নাসরিনকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
অভিযুক্ত স্বামী লিটন মিয়া মনাং গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে। লিটন কথা বলতে পারেন না এবং মানসিক প্রতিবন্ধীও। তাদের তিনটি ছেলে রয়েছে।
চিকিৎসক ও উপস্থিত লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নাসরিনকে সকাল ভোর ছয়টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থয় সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন প্রতিবেশীরা। অবস্থা শঙ্কটাপন্ন দেখে কোন চিকিৎসা না দিয়েই তাকে ময়মনসিংহ পাঠানো হয়। প্রতিবেশীরা তাকে ময়মনসিংহ নিয়ে গিয়ে ভর্তি করলেও টাকা পয়সার সমস্যার কারণে কাউকে না জানিয়ে ফের নেত্রকোনা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
নাসরিন আক্তারের দেবর নান্টু মিয়া জানান, লিটন মিয়া বোবা, কথা বলতে পারেন না। সেইসাথে তিনি মানসিক প্রতিবন্ধীও। মাথায় সমস্যা আছে। পাগলামী করে। প্রায় সময় তাকে ঘরে শেকল দিয়ে তালা মেরে রাখতে হয়। আর তার স্ত্রী নাসরিন ঝুড়িতে করে নানা জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করতেন। তালা খুলে রাখলে প্রায় সময় নাসরিনকে মারধর করতো লিটন। সোমবার ভোরে দা দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রী নাসরিনকে গুরুতর জখম করে লিটন। নাসরিনের পিঠে গভীর ক্ষত হয়েছে। মুখের অনেক কোপ লেগেছে। পরে প্রতিবেশীরা সকাল ছয়টার দিকে তাকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাকে দ্রুত ময়মনসিংহে পাঠান। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে নাসরিন। দরিদ্র নাসরিনের চিকিৎসা করার মতো টাকা নেই।
সদর উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম নোভা জানান, নাসরিনের স্বামী লিটন একজন পাগল। তালা দিয়ে রাখতে হতো তাকে। এর আগেও তার স্বামী তাকে কয়েকবার মারধর করে জখম করেছে। তিন ছেলেসহ পাঁচ সদস্যর পরিবার চালাতে ঝুড়ি দিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করতেন নাসরিন। ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত নাসরিনের ক্ষত জায়গাগুলোতে কোন ব্যান্ডেজ করা হয়নি। এতে শরীরের সব রক্ত বের হয়ে শরীর সাদা হয়ে গেছে। তার বাঁচার সম্ভাবনা কম। দরিদ্র নাসরিনের পরিবারের পক্ষে এই চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে তাকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তা বা বিত্তবানদের সহায়তা দরকার।
নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. রহুল আমীন জানান, রোগীর কাগজপত্র দেখে বুঝলাম সকালে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। ওই সময় দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক রোগীকে ময়মনসিংহ রেফার করেছিলেন। কিন্তু রোগীর সাথে থাকা লোকজন ময়মনসিংহ নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেও কোন চিকিৎসা না নিয়ে আবার নেত্রকোনা নিয়ে চলে এসেছেন। নাসরিনের অবস্থা খুবই শঙ্কটাপন্ন ফের তাকে ময়মনসিংহ পাঠানো হচ্ছে। তবে তার সঠিক গার্ডিয়ান পাওয়া যাচ্ছে না।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, ঘটনা শুনেছি ওই নারীকে সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হলেও বিকেলে আবার নেত্রকোনা হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। ওখানকার চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএস