নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
অক্টোবর ২৬, ২০২২, ০২:৫৮ পিএম
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
অক্টোবর ২৬, ২০২২, ০২:৫৮ পিএম
ময়মনসিংহের নান্দাইলে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের নামে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রীর উপহার সেমিপাকা ঘরে বসবাস করছেন না অধিকাংশ উপকারভোগী। দুই শতাংশ জমি সহ সেমিপাকা ঘর প্রাপ্ত হয়েও তা অন্যজনের নামে ভাড়া ও বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক উপকারভোগী ঘর ও দলিল পেয়েও এখনও পর্যন্ত ঘরে উঠেননি। তারা তাদের নিজ বাড়িতে বা অন্যত্র বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন।
স্থানীয় একটি দালাল চক্র এক জনের নামে বরাদ্দকৃত ঘর অন্যজনকে টাকার বিনিময়ে প্রদান করছে। আবার টাকার বিনিময়ে সে ঘর আবার বহিরাগত লোকের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। পাশাপাশি সে সমস্ত খালি ঘরে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। এমনটি ঘটেছে নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারী আশ্রয়ন প্রকল্পের গুচ্ছ গ্রামে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় চরভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৭৩টি সেমিপাকা ঘরের সারিসারি স্থাপনা রয়েছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও এট্যাচ বাথরুম সহ সুসজ্জিত ঘরগুলো সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনের পর থেকেই অধিকাংশ ঘরে ঝুলছে তালা। পুরাতন ২০টি ঘরের মধ্য বসবাস করছে মাত্র ১১টি পরিবার। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৩, ৬৫, ৬২, ৬০, ৫৭, ৫৬, ৬৬, ৫৫, ৩৫, ৩৭, ৪১, ৫২, ৪৩, ৩১, ২৯, ২৪ ও ২ নং সহ অধিকাংশ ঘরে তালা ঝুলছে। স্থানীয়দের ধারণা উপজেলা প্রশাসনের অবহেলায় চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক উপ-সহকারী কর্মকর্তা সহ ও অফিস পিওন রতন দালালদের সহযোগীতা করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকই এই প্রতিবেদকে জানান। তবে স্থানীয় দালাল চক্রের মূল হোতা কামাল নামে এক ব্যক্তি। উক্ত আশ্রয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন ঘর দেওয়া-নেওয়া নিয়ে তাঁর তোরজোর বেশি। তন্মধ্যে ২৯ ও ২৪ নম্বর ঘরেরর মালিকের বাড়িরঘর আছে। আর ২ নং ঘরটি তিনবার বিক্রি হয়েছে ও ৩নং ঘরে বগুড়ার এক পরিবার ভাড়ায় থাকছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ৭৩ নম্বর ঘরটিকে স্থানীয় দালাাল কামাল তাঁর অফিস ও ক্লাব ঘর নামে ব্যবহার করছে। এছাড়া কামালের বোন ও আত্মাীয়ের নামেও দুটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। বর্তমানে তার বোন ঢাকায় বসবাস করে। ক্লাবঘর নামে ৭৩ নম্বর ঘরটি প্রতিদিনই বেশির ভাগ সময় রাতেই খোলা হয়ে থাকে। সে এখানে বসে আশ্রয়ন প্রকল্পের উপকারভোগী পরিবারের উপর বিভিন্ন ধরনের শাসন-শোষকের কার্য পরিচালনা করে। পাশাপাশি উক্ত ক্লাব ঘরটিতে রাত হলেই মাদক দ্রব্য পান সহ নারীর দেহ ব্যবসায় মেতে উঠে। যা বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের নজরে আসলেও ভয়ে তার (কামাল) বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
এ বিষয়ে কামাল তার বোনের নামে একটি ঘর বরাদ্দের কথা স্বীকার করেন বলেন, তবু দেখাশোনার জন্য মাঝে মাঝে তিনি ৭৩ নম্বর ঘরটিতে যান। যদিও উক্ত ঘরটি তার বোনের নামে বরাদ্দ নেই। পাশাপাশি এ বিষয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ জানান।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মোস্তফা কামাল বলেন, আমি আশ্রয়ণ প্রকল্পের তদন্ত রিপোর্ট ইউএনও’কে দিয়ে দিয়েছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে স্থানীয় এক পরিবারের বাড়ি ঘর সব পুড়ে যাওয়ায় কিছুদিনের জন্য (অস্থায়ী) বসবাস করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি খালি ঘরে তাদেরকে উঠতে দেই। কিন্তুু স্থানীয় নায়েব ও কামাল তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এছাড়া ঘর ভাড়া দেওয়া সহ নানান ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়ে ইউএনও’কে জানালেও তিনি কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করেননি। এখানে আমার আর কিছুই করার নেই।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল মনসুর জানান, আপনি আমাকে তথ্য দেন। আমরা সরজমিন পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এআই