নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
অক্টোবর ২৯, ২০২২, ০২:১৪ পিএম
নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
অক্টোবর ২৯, ২০২২, ০২:১৪ পিএম
কুষ্টিয়ায় চিনি ব্যবসায়ীদের কালো থাবায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চিনির দাম। দামে অস্থিরতার সঙ্গে সঙ্গে চিনির সিন্ডিকেটও তৈরি হয়েছে কুষ্টিয়ায়।
১০ থেকে ১৪ ব্যবসায়ী মিলে নিয়ন্ত্রণ করছেন চিনির বাজার। প্যাকেট চিনির দাম নির্ধারিত হওয়ায় তারা সেগুলো খুলে বেশি দামে খোলা হিসেবে বিক্রি করছেন। এসব চিনি সিন্ডিকেটের কবজায় পড়ে বাজার থেকে দেশী চিনি উধাও হয়েছে।
পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীর বাজার থেকে চিনি খরিদ করতে গেলে ওই সব সিন্ডিটেক চিনি ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদেরকে কোন মোমো দিচ্ছে না। ফলে বাজার মনিটরিং কর্মকর্তাদের ভয়ে দোকানীরা চিনি খরিদ করতে ভয় পাচ্ছে। ক্রেতারা চিনি ক্রয়য়ের মেমো চেইলে সাফ বলে দেয়া হচ্ছে চিনি বিক্রি নেই।
জানা গেছে, প্যাকেট খুলে এসব চিনি পাইকারিভাবে বিক্রি করা হচ্ছে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকায়। খুচরা বাজারে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে কোথাও ১২০ আবার কোথাও ১১০ টাকা কেজি দরে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্যাকেট চিনির দাম ৯৫ টাকা। এ জন্য চিনি সিন্ডিকেট প্যাকেট চিনি ভেঙে খোলা আকারে বিক্রি করছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলায় প্রতিদিন চিনির চাহিদা প্রায় ১০০ টন। সেখানে ১ টন চিনিরও জোগান নেই।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, মিলাররা চিনি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে চিনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সুনিল সুরেকা, তারা ভান্ডার, দীপক সাহা, বিদ্যুৎ সাহা, মোয়াজ্জেম স্টোর, বিজয় আগরওয়ালা, বুদ্ধদেব কুণ্ডু, ধনে আহমেদ, পীর সাহা ও হীরা বাবু, অশোক সাহা, রাশিদুল, কাশি বাবু, মা মুড়ি, জেলার সবচেয়ে বড় পাইকার। বড়বাজার এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য গুদাম রয়েছে তাদের। সেখানে চিনির বিপুল মজুত রয়েছে। চিনির সংকটের খবরে এসব ব্যবসায়ী বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা চিনির বাজার সিন্ডিকেট করছেন। তাদের গুদামে প্রচুর চিনি রয়েছে। সেখানে অভিযান চালালে সত্যতা মিলবে।
ওই ব্যবসায়ী আরও জানান, বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চিনি কিনলেও তারা বিক্রির রসিদ দিচ্ছেন না। কত টাকায় বিক্রি করছেন, তা গোপন রাখছেন। তবে আমাদের আগের কিছু চিনি ছিল, তা ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা চিনি কেনা বাদ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেন মোয়াজ্জেম জানান, চিনির সরবরাহ কম। প্রতিদিন ১০০ টন চিনি প্রয়োজন, সেখানে আছে মাত্র ১ টন। কৃত্রিম সংকট বা সিন্ডিকেটের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জড়িত বিষয়টি ঠিক নয়। ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানি চিনি সরবরাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী বুদ্ধদেব কুণ্ডু জানান, মিলার চিনি সরবরাহ করছেন না। বাজারে চিনি নেই। ক্রেতা এলেও দিতে পারছি না। এ ব্যবসায়ীও বাজার সিন্ডিকেটকে অস্বীকার করেছেন। বড় বাজারের এক পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, আমার দোকানে সাড়ে ৯ কেজী দেশী চিনি ছিল তা আজ সবই বিক্রি করে দেয়েছি। আমি আর চিনি বিক্রি করবো না। দেশী চিনির চাহিদা বেশী থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে কোথাও দেশী চিনির দেখা মিলবে না।
এদিকে বাজারে চিনির সংকট থাকলেও সংশ্লিষ্টদের তদারকি নেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এমনকি প্রশাসনের কারও নজরদারি নেই।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। কেউ যদি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।