মেহেদী হাসান মাসুদ, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
অক্টোবর ২৯, ২০২২, ০৬:১৬ পিএম
মেহেদী হাসান মাসুদ, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
অক্টোবর ২৯, ২০২২, ০৬:১৬ পিএম
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়াই ব্যাংক থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলনসহ জাতীয় শোক দিবস ও শেখ রাসেল দিবসের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম রামপ্রসাদ মালাকর। তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলার হাবাসপুর জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
হাবাসপুর জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটি গঠন হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। কমিটির সভাপতি শাপলা রানী দাস। তিনি বলেন, আমাকে বড় বড় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য ডাকা হয়েছিল। তবে অদ্যবধি আমাকে দিয়ে ব্যাংকের কোন কাগজপত্র কিংবা চেক বই স্বাক্ষর করানো হয়নি। এখন শুনতেছি সভাপতি আর প্রধান শিক্ষকের নামে নাকি ব্যাংকে হিসাব থাকে। শোক দিবসে আমাকে ডাকলেও শেখ রাসেল দিবসে আমাকে ডাকা হয়নি। তবে পুরস্কার দিয়ে ফেরত নেয়ার কথা শুনেছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দুইজন সদস্য ও একাধিক সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্লিপ ফান্ডে ৫০ হাজার টাকা, রুটিন মেরামত ৪০ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক খাতে ১০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন খাতে লক্ষাধিক টাকা অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হলেও বর্তমান সভাপতির স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। জাতীয় শোক দিবসে রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক এসব অনুষ্ঠান দায়সারা করেন। প্রত্যেক বিজয়ী শিশুদেরকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই উপহার দেয়ার কথা থাকলেও বিগত বছরে ক্রয়কৃত বই শিশুদের মধ্যে বিতরণ করেন প্রধান শিক্ষক, যা পরবর্তীতে ফেরত নেয়া হয় বলে অভিযোগ। গত ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবসে শিশুদের মধ্যে চিত্রাংকন, কুইজ, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিজয়ী শিশুদের মধ্যে গত বছরের ক্রয়কৃত বই ৪-৫ জনকে মিলে একটি পুরস্কার ও একাধিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের একটি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিতরণকৃত পুরস্কার কয়েকদিন পর শিশুদের থেকে ফেরত নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রাম প্রসাদ মালাকর শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দিয়ে ফেরত নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। সোনালী ব্যাংকে সভাপতি ও তার নামে যৌথ হিসাবের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো অপারেটর (সভাপতি) পরিবর্তন করা হয়নি। সাবেক সভাপতি রুপনের স্বাক্ষরে পরিচালিত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরের স্লিপ ফান্ড ও অন্যান্য ফান্ডের টাকা উত্তোলন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
যৌথ হিসাবের টাকা কিভাবে উত্তোলন করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাতে কি হয়েছে?
জানা গেছে, উপজেলায় গত বছরের মার্চ মাসে ৯৯ টি স্কুলের স্কুল পরিচালনা পর্ষদ (এসএমসি) গঠন হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক স্লিপ, ওয়াশব্লক, প্রাক-প্রাথমিক, রুটিন মেনটেন্যান্স ও ক্ষুদ্র মেরামতসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করে। উন্নয়ন কাজ করতে প্রত্যেক স্কুলে পিআইসি ও ক্রয় কমিটি করা হয়। এ কমিটি কাজ সম্পন্ন করার পর প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যৌথ হিসাবে উপজেলা শিক্ষা অফিস অর্থ ছাড় করে।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: চঞ্চল শেখ বলেন, জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বিদ্যালয় প্রতি ২ হাজার টাকা দিয়ে থাকে। এছাড়া শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের জন্য স্লিপ ফান্ড থেকে ১ হাজার ৫ শত টাকা ব্যয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়। যা শিশুদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পুরস্কার ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ খরচ করা যাবে। এসব টাকা পকেটস্থ করার কোন সুযোগ নেই। সভাপতির স্বাক্ষর না নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনও গুরুতর অপরাধ। অভিযোগ পাওয়া গেলে খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: আশরাফুল হক বলেন, ‘যে অভিযোগের কথা আপনি বলছেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে, অভিযোগগুলো খুবই গুরুতর। খতিয়ে দেখে হবে, সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আম্বিয়া সুলতানা বলেন, একজন প্রধান শিক্ষকের থেকে এমনটি কাম্য নয়। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
কেএস