কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
নভেম্বর ২, ২০২২, ০৬:২৬ পিএম
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
নভেম্বর ২, ২০২২, ০৬:২৬ পিএম
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পল্লীসঞ্চয় ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার শ্রী টিটু চন্দ্র সরকার (৩৭) যৌতুকের দাবীতে স্ত্রীকে মারপিট ও জখম করার অপরাধের মামলায় ফের কারাগারে।
কেন্দুয়া পল্লীসঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্হাপক রাজীব কুমার সরকার বুধবার (২ নভেম্বর) বলেন, স্ত্রীর মামলার ঘটনায় টিটু চন্দ্র সরকার (জুনিয়র অফিসার,পল্লী -সঞ্চয় ব্যাংক, কেন্দুয়া শাখা) গত ১৭ অক্টোবর থেকে কর্মস্হলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি জেলা প্রধানের মাধ্যমে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নেত্রকোনা শাখার প্রধান কে.এম.তাইফুর সিদ্দিকী জানান, টিটু চন্দ্র সরকারের বিষয়টি ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরসভার গড়কান্দা সাহাপাড়া মহল্লার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা হরিশ চন্দ্র সরকারের কন্যা শ্রীমতি লক্ষী রানী সরকার ( প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা) নেত্রকোনার দক্ষিন সাতপাই এলাকার ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকারের ছেলে (কেন্দুয়া পল্লীসঞ্চয় ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার) টিটু চন্দ্র সরকারের সংগে হিন্দু ( সনাতন) ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
বিয়ের পর সংসার করা অবস্হায় স্বামীকে ৮ লক্ষ ৭০ হাজার নগদ টাকা ও ১২ ভরি স্বর্নালংকার দেওয়া হয়। এরপরও স্বামী টিটু চন্দ্র সরকার স্ত্রীকে মারপিট ও জখম করে তাড়িয়ে দেয়। স্হানীয়ভাবে শালিসের মাধ্যমে মারপিট ও যৌতুক দাবী করবে না মর্মে আপোষ হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই ৫ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য মারপিট করে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়।
দাবীকৃত যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় স্ত্রীকে শরীরের বিভিন্ন স্হানে আঘাত করে এমনকি গলার টুটি চেপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টাও করে।
শ্রীমতি লক্ষী রানী সরকার বাদী হয়ে শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে (২৮ মার্চ) স্বামী টিটু চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে পিটিশন মামলা দায়ের করেন।মামলা নং ১৭৯/২০২২।
বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক (১৩ এপ্রিল) নালিতাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও যৌতুকের দাবিতে মারধর ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়।
পুলিশ আসামী টিটু চন্দ্র সরকারকে গ্রেফতার করে ২ জুন শেরপুর আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরন করেন। কিছুদিন পর জামিনে বেড়িয়ে আসে টিটু। বিজ্ঞ আদালত ১৭ অক্টোবর থেকে টিটু চন্দ্র সরকারকে জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে শেরপুর কারাগারে রয়েছে টিটু চন্দ্র সরকার।
মামলার বাদী, লক্ষী রানী সরকারের সংগে মোবাইলে কথা হলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধার মেয়ে ও শিক্ষিকা। ৩ বছর হয়েছে বিয়ে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য আমাকে প্রায়ই মারপিট করে এমনকি গলায় চেপে হত্যা করতে চেষ্টা করে।আমার স্বামী যৌতুকলোভী ও কুরুচিপূর্ণ প্রকৃতির লোক। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ তাকে জেল হাজতে প্রেরন করে। জামিনে এসে আমাকে নির্যাতন করবে না বলে অঙ্গীকার করলেও পুনরায় সে চিকিৎসার খরচসহ বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছে। এরপরও আমাকে মারপিট করে। আমি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে চলে আসি। ওই মামলায় গত ১৭ অক্টোবর থেকে সে ( টিটু চন্দ্র সরকার) জেল হাজতে রয়েছে। আমি আইনের মাধ্যমে সঠিক বিচার চাই।
উল্লেখ্য যে, পল্লীসঞ্চয় ব্যাংক, কেন্দুয়া শাখার জুনিয়র অফিসার টিটু চন্দ্র সরকারকে নেত্রকোনা থেকে কেন্দুয়ায় তাৎক্ষনিক শাস্তিমূলক বদলী করা হয়। কেন্দুয়ায় যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিভাগীয় মামলার ঘটনায় ২০২০ সালে ২৫ আগষ্ট ও ২৬ অক্টোবর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ইএফ