বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
নভেম্বর ১৯, ২০২২, ০৮:২৮ পিএম
বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
নভেম্বর ১৯, ২০২২, ০৮:২৮ পিএম
নাটোরে অসীম সাহা (৪০) নামে এক ব্যবসায়ী তার স্ত্রী ও শিশু পুত্রসহ নিখোঁজ হওয়ার খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর নাটোর সদর থানায় এসংক্রান্ত একটি জিডি দায়ের করা হলেও পরিবার সহ অসীম সাহার নিখোঁজ হওয়ার খবরটি গত বৃহস্পতিবার জানাজানি হয়। অসীমের ভাই সুব্রত সাহা এই জিডি দায়ের করেছেন।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে অসীম সাহা, তার স্ত্রী সীমা সাহা (৩৫) ও তার ৮ বছরের শিশু পুত্র আর্য সাহা ২৩ অক্টোবর বিকেল থেকে নিখোঁজ রয়েছে। অথৈ সাহা নামে তার মেয়েকে সম্প্রতি বিয়ে দিয়েছে নওগাঁতে। সেখানে খোঁজ করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরিবার সহ অসীমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অসীম সাহা শহরের নিচাবাজার এলাকার সন্তোষ সাহার ছেলে। অসীম সাহা ২০১৪ সালে মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জাতীয় মৎস্য পদক লাভ করেন। সফল মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে সে শহরের মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া নাটোরে মিনা পল্লী নামে একটি মৎস্য ও কৃষি খামারের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঠিকাদারী ব্যবসায় নিয়োজিত। ঠিকাদারী ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি কয়েক কোটি টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা ফেরত না দেওয়ার মামলাও বিচারাধীন রয়েছে আদালতে। জনৈক সঞ্জয় সাহা নামে এক ব্যবসায়ী এই মামলাটি দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে অসীমের ভাই সুব্রত সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাদের পরিবারের যৌথ ব্যবসা থেকে অসীমকে প্রায় ১০ বছর আগে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিবারের ব্যবসার সাথে তার কোন অংশীদারিত্ব নেই। সে এখন তার স্ত্রীর ভাই (সমন্ধি) সাগরের সাথে ঠিকাদারী ব্যবসায় নিয়োজিত। সেই ব্যবসায় কোন ভাল ফলাফল নেই। সম্ভবত সে ঋন গ্রস্থ হয়ে পড়েছে। সে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এক সুদ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা সুদে নেয়। সুদসহ যার পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা দাঁড়ায়। মূল টাকা ফেরত দিতে চাইলে ওই সুদ ব্যবসায়ী তার ভাই অসীম সাহা ও তার স্ত্রী সীমা সাহার বিরুদ্ধে নাটোর, মাদারীপুর ও ঢাকায় চেক জালিয়াতির একাধিক মামলা দায়ের করেন। সুদ ব্যবসায়ী মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি অসীম সাহাকে সুদের টাকার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সে চিন্তিত ছিল।
সুব্রত আরও জানান, অসীম তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বেড়াতে বের হতো। সেদিনও তারা বেড়াতে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। অসীম ও সীমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করে তাদের সন্ধান পাওয়া যায় না। তাদের সন্ধান করতে না পেরে ১৩ নভেম্বর নাটোর সদর থানায় তিনি তার নিখোঁজের বিষয়ে লিভিখভাবে জানিয়েছেন। এদিকে পরিবার সহ অসীম সাহার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা অসীম ও তার স্ত্রী -সন্তানরে নিখোঁজ হওয়ার দাবি করলেও তাদের প্রতিবেশী সহ বিশিষ্টজনরা ভিন্নমত পোষন করেছেন।
অসীমের প্রতিবেশী জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি ও ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, ঋণগ্রস্থ হওয়ায় সে হয়ত দেনার দায় এড়াতে নিজেকে আড়ালে রেখেছেন বলে ধারণা করছেন। তাকে না পাওয়ার খবরটি জানার পর ভেবেছিলেন তারা হয়ত ভারতে বেড়াতে গিয়েছেন। পাওনাদাররা প্রায় প্রতিদিনই তার কাছে এসে ধরনা দেয়। স্ত্রী সন্তান সহ নিখোঁজ হলে বিষয়টি উদ্বেগজনক।
এদিকে এসব বিষয়ে জানতে ঋনপ্রদানকারী জনৈক সঞ্জয় সাহা এবং আসীমের ঠিকাদারী
ব্যবসার পার্টনার তার স্ত্রীর ভাই (সমন্ধি) সাগর সাহার খোঁজ করে তাদেরও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাদের প্রতিবেশীরা জানায়, সাগর বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। সেখানেই সম্ভবত স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
অপরদিকে টাকার দাবীদার সঞ্জয় সাহাও বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে অসীম সাহার প্রতিবেশী নাটোর পৌর মেয়র ও জেলা পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি উমা চৌধুরী জলি বলেন, অসীম সাহা কয়েক কোটি টাকা ঋনগ্রস্থ। এবিষয়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে। এই টাকার বিষয়ে বেশ কয়েকবার আমার চেম্বারে সালিশ বৈঠকও হয়েছে। কয়েকজন পাওনাদারের হয়ে তিনি জামিনদার হওয়ায় বিপদে পড়ে আছেন। অসীমকে না পেয়ে পাওনাদাররা তার বাড়িতে এসে ভির করছেন। তারা এখন আমার কাছে এসে টাকা চাইছে। মনে হয় দেনার দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সে বৌ-ছেলে সহ আত্মগোপন করেছে। অসীমের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশের উচিত তদন্ত করে দ্রুত প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা। আমার জানামতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছিম আহম্মেদ জানান, কি কারণে তারা স্বপরিবারে নিখোঁজ সেটা এখনও সুস্পষ্ট নয়। তবে ১৩ নভেম্বর ব্যবসায়ী অসীম সাহার বড় ভাই সুব্রত সাহা নাটোর সদর থানায় জিডি দায়ের করেছেন। নিখোঁজের ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।
কেএস