মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
নভেম্বর ২০, ২০২২, ০৬:২২ পিএম
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
নভেম্বর ২০, ২০২২, ০৬:২২ পিএম
মিরসরাইয়ে ছয় বছরে বয়সের এক মাদ্রাসা শিশু শিক্ষার্থীকে ষাট ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ কর্তৃক যৌন নিপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত বৃদ্ধের নাম মিরাজ উদ্দিন খান (৬৫)। তিনি ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ আমবাড়িয়ার আব্দুল লতিফ পাঠান বাড়ির আব্দুল লতিফের ছেলে। ঘটনার জেরে সমাজ পতিরা ৩০ হাজার টাকায় উৎকোচ নিয়ে শিশুর পরিবারকে পুলিশ ও সাংবাদিকের কাছে মুখ খুলতে বারণ করেছেন, অন্যথায় সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন ওয়ার্ড মেম্বার।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ আমবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মিরাজ উদ্দিন খানের মুদির দোকানের ভেতরের কক্ষে কন্যা শিশুকে যৌন নিপীড়নের পর রাত ৯টায় স্থানীয় একটি ক্লাব কক্ষে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি ধামা পচা দেওয়া হয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবারের দেয়া বক্তব্যে জানা যায়, শনিবার দুপুরে মাদ্রাসার বিরতির সময় কলম কিনতে মুদি দোকানদার মিরাজ খানের দোকানে গেলে শিশু শিক্ষার্থীকে জোর পূর্বক তার দোকানের ভেতরের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে শিশুর জামা কাপড় খুলে স্পর্শকর স্থানে পাশবিক আচরণ করে। শিশু শিক্ষার্থী বাড়িতে গেলে তাকে গোসল করানোর সময় যৌন নিপীড়নের বিষয়টি তার মায়ের নজরে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটি তার মায়ের কাছে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি প্রকাশ করে। ঘটনাটি শিক্ষার্থীর মা মাদ্রাসা শিক্ষকদের জানালে তারা স্থানীয় মেম্বার ও সমাজ পতিদের জানান। এতে সমাজ পতিরা রাতে একটি সামাজিক ক্লাবে বসে সালিশের ৩০হাজার টাকা জরিমানা ও কান ধারণ এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবেন না মর্মে একটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। নির্যাতিত শিশুর পরিবার থেকেও সালিশ মেনে নেওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ জোর পূর্বক স্বাক্ষর আদায় করা হয়। সালিশানের পক্ষ থেকে থানা পুলিশ ও সাংবাদিকদের এড়িয়ে যেতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। অন্যথায় সমাজ চ্যুত কারার ভয় দেখানো হয়। ভয়ে আতঙ্কে ও সমাজ চ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় আইনি সহতানিতে পারছেন না পরিবারটি।
যৌন নিপীড়নের শিকার শিশুর মা জানান, আমার স্বামী ও দেবর বিদেশে থাকে। আমরা শুধু মাত্র মহিলারা দেশে আছি। আমাদের কোন পুরুষ অভিভাবক নেই । তাই তারা যা করেছে তা মেনে নিতে হচ্ছে।
এব্যাপারে জানতে চইলে সালিশান ওয়ার্ড মেম্বার ইউসুফ হারুন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফা জানান, শালিশে সমাজের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সকলের সম্মতি ক্রমে উপযুক্ত বিচার করা হয়েছে।
কিন্তু সরজমিনে গিয়ে তাদের বক্তব্যের ভিন্নতা পওয়ায়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্তকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া উভয় পক্ষ থেকে থেকে স্বাক্ষর নেয়া একটি ১০০ টাকা মূল্যের নন জুড়িশিয়াল স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। সালিশে উপস্থিত ১৩ জনের স্বাক্ষরিত সাক্ষীর ও একটি তালিকা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায় মূল সালিশান মেম্বার ইউসুফ হারুনের কোন স্বাক্ষর নেই। অভিযুক্ত মেরাজ উদ্দিন খানের ফোন নাম্বারে কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
খৈয়াছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, চেয়ারম্যন হিসেবেও আমার পক্ষে সম্ভব নয় এমন সালিশ করা যারা করেছে তারা ঠিক করেনাই।
মিরসরাই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, নির্যাতিতের পরিবার অভিযোগ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় আইনি পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ইউএনও মিনহাজুর রহমান বলেন, এমন অপরাধের বিচার একজন ইউপি সদস্য করতে পারেন না। খোজ খবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহিলা বিষয়ক পরিচালক মাধবী বড়ুয়া জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিবেন।
এসএম