বরিশাল ব্যুরো
নভেম্বর ২৬, ২০২২, ০৪:৩৩ পিএম
বরিশাল ব্যুরো
নভেম্বর ২৬, ২০২২, ০৪:৩৩ পিএম
আগেকার দিনে যখন কাঠ-কয়লায় বা উনুনে রান্না করা হতো, তখন মাটির হাঁড়ির প্রচলটা ছিলো সবচেয়ে বেশি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রান্নার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। সাথে মাটির হাঁড়ির ব্যবহারও কমে গেছে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন-মাটির হাঁড়িতে রান্না করা খাবারে যেমন আলাদা স্বাদ হয়, তেমনি এ খাবার স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
সূত্র মতে, বর্তমানে ভারতে মাটির হাঁড়িতে রান্নার প্রচল থাকলে বাংলাদেশে এখন আর তেমন দেখা মেলেনা। তাই সম্প্রতি বরিশাল নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে মাটির হাঁড়িতে নানাধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করতে দেখা গেছে। আর এসব খাবার খেতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ভোজনরসিকদের। প্রথমবারের মতো নগরীর চৌমাথা এলাকায় ‘এ্যারাবেল্লা’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে মাটির হাঁড়িতে রান্নার আয়োজন করা হয়।
ভোজনরসিক মোসাদ্দেক হাওলাদার বলেন, মাটির হাঁড়িতে রান্না করা খাবারের স্বাদ সত্যি অসাধারণ। তাই খাবার আসল স্বাদ পেতে তারা এখানে এসেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই রেস্টুরেন্টে মাটির হাঁড়িতে রান্নাকরা জিভে জল আনা ব্যতিক্রমী খাবার খেতে প্রতিদিন ভোজনরসিকদের ভিড় লেগেই রয়েছে। মাটির হাঁড়িতে উল্লেখযোগ্য রান্না করা খাবারের মধ্যে রয়েছে-খাসির মাংস, গরুর মাংস, হাঁস ও মুরগীর মাংস। পাশাপাশি মাটির হাড়িতে রান্না করা হয় বিরিয়ানী। এসব মাংস দিয়ে খাবারের জন্য এখানে তৈরি করা হয় চালের রুটি। সরকারী বজ্রমোহন কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জেসিকা আহম্মেদ জুঁই ও শাম্মি আক্তার এ রেস্টুরেন্টে হান্ডি বিফ (মাটির হাঁড়ির মধ্যে গরুর মাংস রান্না) ও হান্ডি বিরিয়ানী (মাটির হাঁড়ির মধ্যে বিরিয়ানী রান্না) খেতে এসেছেন। তারা বলেন, ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি আগেকারদিনে মাটির হাঁড়িতে খাবার রান্না করা হতো কিন্তু কোনদিন তা চোখে দেখিনি। তাই এ্যারাবেল্লা নামের এ রেস্টুরেন্টে পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে মাটির হাঁড়িতে রান্না করার খবর পেয়ে এসেছি।
তারা আরও বলেন, আগে এ ধরনের খাবার খাইনি। মাটির হাঁড়িতে রান্না করা খাবারের স্বাদের তুলনা হয় না।
ওই রেস্টুরেন্টের কর্মীরা বলেন, সকালে ক্রেতাদের কম চাঁপ থাকলেও বিকেল হতে না হতেই ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়। এখান থেকে ক্রেতারা শুধু খেয়েই যায় না; তারা বাসা বাড়িতে পারিবারের জন্যও নিয়ে যান।
রেস্টুরেন্টটির প্রধান সেফ বাচ্চু মিয়া বলেন, সাধারণ পাত্রের রান্না চেয়ে মাটির পাত্রে রান্নার মূল পার্থক্য হচ্ছে স্বাদ আর পুষ্টি উপাদানে। কাঁচ বা স্টিলের পাত্রের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে মাটির পাত্রের ব্যবহার প্রায় হারাতে বসেছে। তাই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবং ক্রেতাদের ভালো মানের খাবার পরিবেশনের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ কামরুজ্জামান বলেন, মাটির পাত্র একধরনের ক্ষারীয় উপাদান দিয়ে তৈরি। যা খাবারের অ্যাসিড প্রক্রিয়াজাতকরণে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়তা করে। তাছাড়া মাটির পাত্রে রান্না করা খাবারে লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফারের মান বেশি থাকে।
মাটির পাত্রে রান্নার উপকারিতা
স্বাদ ও পুষ্টির বিবেচনায় সবধরনের রান্নার জন্য মাটির পাত্র উপযোগী। আয়ুর্বেদশাস্ত্র অনুযায়ী, মাটির পাত্র রান্না ধীর করে এবং খাবারের স্বাদ ও মান উন্নত করে। মাটির পাত্রে রান্না করলে খুব সহজেই তেলের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া যায়। কেননা এর প্রাকৃতিক আর্দ্রতা খাবার ভালোভাবে রান্না করার জন্য উপযোগী। মাটির পাত্র কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়। যাতে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষারীযুক্ত হয়। তাপ প্রয়োগে মাটির পাত্র খাবারের অ্যাসিডের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এবং পিএইচয়ের ভারসাম্য বজায় রাখে। যা খাবারকে সহজপাচ্য করে। তাছাড়া এটা খাবারের পুষ্টি উপাদান যেমন-লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগ্নেসিয়াম এবং সালফার ঠিক রাখে। মাটির পাত্রের রান্নায় তেল কম লাগে। এছাড়াও খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় রেখে স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুন্ন রাখে। যা অন্যান্য উপাদানের তৈজস দিয়ে সম্ভব নয়।