Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪,

৫০ হাজার ঘুষ নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা বললেন ‘সম্মানী’ নিয়েছি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৬:০২ পিএম


৫০ হাজার ঘুষ নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা বললেন ‘সম্মানী’ নিয়েছি

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য মোটা টাকার ঘুষ গ্রহণ করেছেন রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। তার ঘুষ গ্রহণের সময়কার একটি ভিড ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে। তবে এটা ঘুষ নয় বরং সম্মানী হিসেবে তিনি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এই টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা ৫০ হাজারের কথা বললেও টাকার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

এই টাকার সঙ্গে গাড়িভাড়া হিসেবে তিনি আরও ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও জানান শিক্ষা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।

জানা যায়, শনিবার (৩ ডিসেম্বর) উপজেলার ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য পদ পূরণের জন্য নিরাপত্তাকর্মী, নৈশ প্রহরী, অফিস সহায়ক ও পরিছন্নতা কর্মী পদে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় না দিয়ে টাকার বিনিময়ে চারজনকে পাতানো নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। আর এতে সহযোগিতা করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম।

শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানে চারটি পদের বিপরীতে মোট কতজন আবেদন করেছেন, যাচাই-বাছাইয়ে কতজন টিকেছেন এবং তাদেরকে কবে প্রবেশপথ পৌঁছানো হয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে কাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হলো তা নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা না করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে টেবিলের আড়াল করে তার হাতে একটি টাকার বান্ডিল তুলে তেন। শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা টা নিয়ে তার স্যুটের ভিতরের ডান পকেটে রাখেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তার হাতে আরও কিছু টাকা দিলে শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা টা গুনে তার স্যুটের ভিতরের বাম পকেটে রাখেন। এ সময় পাশেই বসে ছিলেন ডিজির প্রতিনিধির পাঠানো মনোনীত কর্মকর্তা।

এ সময় তার পাশে থাকা ডিজির প্রতিনিধির মনোনীত কর্মকর্তাকেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কতৃক টাকা দিতে দেখা যায়। তবে সেখানে তারা এ বিষয়ে কোন কথা না বলে বেরিয়ে গিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে চলে যান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাকা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী বলেন, আমি তাকে কোনো টাকা দেইনি। কিন্তু টাকা দেওয়ার ভিডিও আছে বললে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

টাকা গ্রহণের বিষয়টি জানতে চাইলে রায়গঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার বলেন, আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি আমার অর্নারিয়াম (সম্মানী) হিসেবে। এটা ঘুষ নয়। এ ছাড়াও আমি গাড়িভাড়া হিসেবে আরও ৩ হাজার টাকা নিয়েছি।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি অনিল কুমারে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে ডিজির প্রতিনিধি কাজিপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিমের মুঠোফোনে কল দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় সেখানে যেতে পারিনি। আমার প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষককে পাঠিয়েছিলাম। তবে নিয়োগে এমন টাকা লেনদেন হওয়ার কথা নয়।

আপনি ডিজির প্রতিনিধির দায়িত্ব দিয়ে কাকে পাঠিয়েছিলেন তার নাম পরিচয় ও মুঠোফোন নাম্বার চাইলে, তার নাম-পরিচয় দিয়ে কি করবেন বলে তিনি তা না দিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সবসময়ই স্বচ্ছ হবে এটাই প্রত্যাশা, কারণ এখানে মানুষের জীবিকার ব্যাপার থাকে। এছাড়াও যেহেতু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন তিনি সম্মানী নিয়েছেন সে ক্ষেত্রে তাদের কত টাকা সম্মানী নেওয়ার নিয়ম আছে সেটা আমি জানি না। তবে যদি এখানে অনিয়ম দূর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে আশা করছি উনার শিক্ষা বিভাগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়াও বিষয়টি কতৃপক্ষের দৃষ্টি গোচর হলে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ বলেন, এত টাকা কারো অর্নারিয়াম (সম্মানী) হতে পারেনা। বিষয়টি আগামীকাল অফিস খুললে আমি জানার চেষ্টা করবো। এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি, উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. তমাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। আমরা অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

কেএস 

Link copied!