Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বরেন্দ্র অঞ্চলে পেঁয়াজের ভালো ফলনে দ্বিগুণ লাভের আশা

গোদাগাড়ী(রাজশাহী) প্রতিনিধি

গোদাগাড়ী(রাজশাহী) প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৬:২৮ পিএম


বরেন্দ্র অঞ্চলে পেঁয়াজের ভালো ফলনে দ্বিগুণ লাভের আশা

আমদানি নির্ভরতা কমাতে সারাবছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী করতে থাকে কৃষকদের, নিয়ে আসে প্রণোদনার আওতায়। ভারতের নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ শুরু হয় দেশে। বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে ফলেছে ইন্ডিয়ান এ পেঁয়াজ। গ্রীষ্মকালে বাজারজাত করতে পারায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন এখানকার চাষিরা।

এবার বরেন্দ অঞ্চলজুড়ে চাষ হয়েছে নাসিক জাতের পেঁয়াজ। স্বাভাবিক গাছের মতো হলেও নতুন জাতের পেঁয়াজের লাল রঙ্গের গুটি-বেশ বড় হয়। রংপুরের পীরগাছায় আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।

রাজশাহীতে আরমাত্র দিন দশেকের মধ্যেই বাজারে দেখা মিলবে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ। অন্তত ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ধামিলা এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে প্রথম প্রথম মনে করেছিলাম হবে না। কিন্তু না, আমার ধারণা ভুল। অনেক সুন্দর পেঁয়াজ হয়েছে। মাস খানেক পর তুলবো। দাম বেশি পাব বলেই তো মনে হচ্ছে। ৪০ টাকা হিসেবে বিক্রি করলে ১৬০০ টাকা মণ হয়।

গোদাগাড়ী উপজেলার ঈশ্বরীপুর ব্লক দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার, ঔষধ, পলিথিনসহ প্রয়োজনীয় যা যা উপকরণ সব বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। মাঠে গিয়ে রোগ-বালাই, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ সবকিছু পুঙ্খানু-পুঙ্খানুভাবে মনিটরিং করা হয়েছে। অনেক ভালো হয়েছে পেঁয়াজ। আশা করছি এ পেঁয়াজ চাষে চাষিরা লাভবান হবে।একই কথা জানান বাগমারা উপজেলার দক্ষিণ দৌলতপুরের হাসনীপুর এলাকার চাষি মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন।

এই চাষি বলেন, আমার পেঁয়াজ বেশ ভালো আছে। গাছের চেহারা দেখার মতো। সার, পলিথিন, দড়ি, ঔষধ সবকিছু কৃষি বিভাগ থেকে দিয়েছে। শুধু জমিটা আমার, কাজকর্ম সব কৃষি বিভাগের। এখন পাতাসহ বিক্রি করতে পারব কিন্তু এখন না পরে বিক্রি করব। পরে আরো দাম পাব। মার্চ-এপ্রিল মাসে বাজার টান থাকে। তখন বেচলে বেশি দাম পাওয়া যাবে।

জানা যায়, রাজশাহীর চার জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ‘তাহিরপুরি’ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। জেলার মোহনপুর, তানোর, চারঘাট, বাগমারাসহ সবকটি উপজেলার বেশিরভাগই চাষ হয় এ পেঁয়াজ। তবে এসব এলাকার পেঁয়াজ চাষিদের কাছে নতুন এ নাসিক পেঁয়াজ বেশ সাড়া জাগিয়েছে। যেখানে স্থানীয় তাহেরপুরি পেঁয়াজ বীজ হিসেবে বাড়িতে সংরক্ষণ করতেন তারা সেই জায়গা দখল করতে পারে উচ্চফলনশীল নাসিক। এছাড়া গুণে ও মানে অন্যান্য পেঁয়াজের চাইতে ভালো হবে বলেই জানা গেছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর ১১টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে চাষ হয়েছে নাসিক পেঁয়াজ। প্রণোদনার আওতায় প্রথম দফায় ২ হাজার জন কৃষককে দুই হাজার কেজি পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আরো ২ হাজার জনকে ২ হাজার কেজি বীজ দেওয়া হয় বিনামূল্যে। মোট হিসেবে প্রণোদনার মাধ্যমে ৪ হাজার কৃষক চাষ করেন লাল পেঁয়াজ। প্রতি কেজি বীজ ১ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন তারা। ফলে জেলার ৪ হাজার বিঘা জমি ছেয়ে আছে ভারতীয় এ পেঁয়াজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। জেলায় হেক্টর প্রতি ১৬ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন ফলনে মোট উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। হেক্টরে ১৯ দশমিক ৬২ টন ফলনের আশা রয়েছে কৃষি বিভাগের।

জেলা কৃষি দপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা: উম্মে সালমা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করেছেন। বীজ রোপণ থেকে শুরু করে শেষ পর্যায় পর্যন্ত মনিটরিং করেছেন তিনি।

ভারতীয় নাসিক জাতের এ পেঁয়াজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় পেঁয়াজ এন-৫৩ আমরা বাজারজাত করতে পারব। দামও ভালো আশা করছি। জুলাই-আগস্ট মাসে বীজ রোপণ করে এখন তা ঘরে তুলতে পারছি পেঁয়াজ। অন্য ফসলের তুলনায় পেঁয়াজের দাম বেশি থাকার কারণে কৃষক লাভবান হয় এটা সত্য। সারাবছর আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমরা মাঠে আছি। তেল ও মসলা ফসলের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আমরাও কৃষকদের সচেতন ও আধুনিক করছি। আমরা কৃষি বিভাগ ও কৃষি মন্ত্রণালয় জোর করে বলতে পারবো আমরা পেঁয়াজেও সফলতা এনেছি।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এবছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পেঁয়াজ লাগানোর জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে।

পেঁয়াজ আমদানি ও কৃষকদের নতুন জাতের পেঁয়াজ চাষের মধ্যে বৈরিতা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের গড় ঘাটতি থাকে ৪ লাখ টন। এ পরিমাণ পেঁয়াজ আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারলে আর আমদানি নির্ভর হয়ে থাকতে হবে না। তবে দেশের কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মহল ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি করে ফলে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হয় কষ্টের ফসল। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সচেতনভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে মনে করছি। সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। ভারতীয় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ দেশের জন্য অনেকটাই সুফল বয়ে আনবে। আমদানি নির্ভরতা কমবে। ডলার ব্যয় করতে হবে না। সেইসাথে দেশের পেঁয়াজ সঙ্কট সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসএম

Link copied!