ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ০৩:৫২ পিএম
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ০৩:৫২ পিএম
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা উপকরণ স্বল্পতায় উন্নত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভূরুঙ্গামারীতে একটি ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা উপকরণের স্বল্পতা রয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এগারোটি জুনিয়র কনসাল্টেন্টের পদ থাকলেও জুনিয়র কনসাল্টেন্ট আছেন মাত্র একজন। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী, শিশুরোগ, কার্ডিওলোজি, চক্ষু, অর্থোপেডিক্স, নাক, কান ও গলা, এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জুনিয়র কনসাল্টেন্ট পদে চিকিৎসক নেই। এছাড়া ডেন্টাল সার্জনের পদ ফাঁকা রয়েছে।
নির্ভূল রোগ নির্ণয়ের সুবিধার্থে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা চালু করা হলেও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগীরা এসব সুবিধা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এক্সরে মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। দু`টি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের একটি নষ্ট। চারটি ইসিজি মেশিনের তিনটি অকেজো। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে মেশিন পরিচালনার টেকনিশিয়ান নেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন টেবিল নেই। সেই সাথে নেই অপারেশন লাইট। এতে দরিদ্র রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অপারেশন সুবিধা পাচ্ছেন না।
উপজেলার শিলখুড়ী, চরভূরুঙ্গামারী, সোনাহাট ও শাহীবাজারে চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এসব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও শিলখুড়ী, চরভূরুঙ্গামারী ও শাহীবাজার উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার নেই।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। সোনাহাট ও শাহীবাজার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই। এছাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে ফার্মাসিস্ট থাকেন। চরভূরুঙ্গামারী, শিলখুড়ী ও শাহীবাজার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেই ফার্মাসিষ্ট।
পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার কারণে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সপ্তাহের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষরা হাতের নাগালে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না।
উপজেলার পাথরডুবি, তিলাই, পাইকেরছড়া, জয়মনিরহাট ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নে পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে একজন করে সহকারী সার্জন চিকিৎসক হিসেবে থাকার কথা থাকলও পাথরডুবি, তিলাই, পাইকেরছড়া ও জয়মনিরহাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সহকারী সার্জন পদ শূন্য রয়েছে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের (স্যাকম) পদ থাকলে পাথরডুবি, তিলাই, জয়মনিরহাট ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই।
শিলখুড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা সামসুল আলম জানান, ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বেশির ভাগ সময় বন্ধই থাকে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগীর স্বজনরা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয় না। তাই বেসরকারি ক্লিনিকই ভরসা। বেশি টাকা খরচ করে সেখান থেকে এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হচ্ছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি সুবিধা চালু থাকলে একদিকে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বল্প মূল্য সেবা পাবে। অপরদিকে সরকার এখান থেকে নিয়মিত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সাজ্জাদ মোহম্মদ সায়েম বলেন, চিকিৎসক ও চিকিৎসা উপকরণ স্বল্পতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক ও উপকরণ স্বল্পতা দুর হলে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
এসএম