Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

৩৬ বছর পর মা-বাবার কোলে নান্দাইলের গৃহবধূ হাসিনা

শাহজাহান ফকির, নান্দাইল (ময়মমনসিংহ)

শাহজাহান ফকির, নান্দাইল (ময়মমনসিংহ)

ডিসেম্বর ১৩, ২০২২, ০২:৫৩ পিএম


৩৬ বছর পর মা-বাবার কোলে নান্দাইলের গৃহবধূ হাসিনা

‘যদি থাকে নসিবে, আপনা-আপনি আসিবে...’ বাউল সাধক শামসুল হক চিশতীর গানের প্রথম পংক্তির কথা যেন মিলে যায় ময়মনসিংহের নান্দাইলের গৃহবধূ হাসিনার জীবনের সঙ্গে। সৃষ্টিকর্তা যদি সহায় হয় তবেই যেন মানুষের স্বপ্নগুলো পূরণ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি দীর্ঘ ৩৬ বছর তথা তিনযুগ পর গৃহবধূ হাসিনা’র স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ফিরে পেয়েছেন তার জন্মদাতা মা-বাবাকে।

জানা গেছে, হাসিনা আক্তার (৪২) ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের মেয়ে। ৩৬ বছর আগে ৬ বছর বয়সের সময় ভূল করে লঞ্চে উঠে পড়ায় মা-বাবা স্বজনদেরকে হারিয়েছেন তিনি। সেই ইঞ্জিন চালিত লঞ্চে চলে আসেন ঢাকা সদর ঘাটে। সেখানে তাকে একা কাদঁতে দেখে পালিত বাবা হাসিম উদ্দিন ও তার মা মরিয়ম তাকে নিজ সন্তানের মতোই লালন-পালন করে।

পরে হাসিনাকে বিয়ে দেয় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের অরণ্যপাশা গ্রামের গ্রাম্য কবিরাজ ফজলুর রহমানের সাথে। বর্তমানে দুই ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে তিনি ছয় সন্তানের জননী। স্বামী সহ সন্তানদেরকে নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তুু মনে ছিল নিজ মা-বাবাকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন। জীবন চলার ফাঁকে খোঁজে বেড়াতেন আপনা মা-বাবার ঠিকানা। কারণ ছয় বছর বয়সে বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর বাবা-মা ও ভাইয়ের নাম ছাড়া আর কিছুই তার মনে ছিলনা।

অবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) ও আপন ঠিকানা নামে একটি সংস্থার সহযোগীতায় সন্ধান পান পরিবারের। সেখানে তাঁর ছোট বেলার সকল তথ্য জমা দেন। পরবর্তী হাসিনার তার বাবার বাড়ির এক আত্মীয় দুবাই শহরে থাকেন। সেই প্রবাসী মোবাইলে ফেসবুকে তার তথ্য পেয়ে তাঁর বাবা খোরশেদ আলমকে জানান। পরবর্তী ঢাকায় আপন ঠিকানায় সন্ধান করে ছোটবেলায় কেটে যাওয়া মুখের দাগ সবকিছুরই মিল পেয়ে যান।

এভাবে ফিরে পায় গৃহবধু তাঁর আপন মা-বাবা ও স্বজনদেরকে। গৃহবধূ হাসিনা জানান, ছোটবেলায় নিজেে হারিয়ে মা-বাবার আদর-সোহাগ সহ অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়েছি। তবে ৩৬ বছর পর আমার মা-বাবাকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।

হাসিনার বাবা খোরশেদ আলম (৮০) জানান,  আমি প্রতিদিনই মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম। আল্লাহ আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরে দিয়েছে। আমি এখন অনেক খুশী। আমি তাদেরকে বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাবো। তার সর্বশেষ অধিকারটুকু ফিরে দিতে পারলেই আমার শান্তি।

হাসিনার স্বামী ফজলুর রহমান বলেন, সবকিছু জেনেই হাসিনাকে বিয়ে করি। আল্লাহর ইচ্ছায় এই খুশির দিন পেলাম।  

এআই

Link copied!