Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

অবৈধ ইট ভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ০২:৪১ পিএম


অবৈধ ইট ভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ

সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১৬টি ইট ভাটায় প্রকাশ্যে চলছে কাঠ পুড়ানোর মহা উৎসব। সেই সাথে চলছে অবৈধ ভাবে ইট ভাটার ব্যবসা। হুমকিতে লোকালয় ও কৃষিজমি।

এদিকে কুমারখালী উপজেলায়  ৭টি ও দৌলতপুরে কয়েকটি অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হলেও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার একটি ভাটাতেও এখনো কোন প্রকার অভিযান পরিচালিত হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ও বেপরোয়া ইট ভাটার ব্যবসা প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় যেখানে ১৬টি ইট ভাটার মাত্র ১টি বৈধ, ১৫ টি অবৈধ। এখানে ১৫ টি ইট ভাটায় নষ্ট করেছে অন্তত ২০/২২টি বিস্তীর্ন ফসলের মাঠ। নামমাত্র কয়লার ভাটা থাকলেও বাকিসব চলে কাঠ পুড়িয়ে, কাটা হয় ফসলী মাটি। কোন কোনো উদ্যোক্তা কয়লার ভাটা বন্ধ রেখে লাগামহীন চালাচ্ছেন গাছ পোড়ানোর মহা উৎসব। ইটের ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ কাটা কল।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক বলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৬টি  ইট ভাটার সব কয়টি অবৈধ। কোন ভাটার ইট পুড়ানো লাইসেন্স নেই। ভাটা মালিক সমিতি হাই কোর্টে একটা রীট ফাইল করেই তারা ইট পুড়াচ্ছে। তবে চলতি মৌসুমে ৭ হাজার টাকা টন কয়লা ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরী করছে।

তারা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ইট পুড়াচ্ছি। প্রশাসনের সাথে একটু ঝামেলা হলেই তারা মাঝে মধ্যে ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করছে। তবে সব ভাটায় অভিযান চলেনা। যে কারণেই প্রকাশ্যে ইটভাটা গুলোতে অবাধে কাঠ পুড়াচ্ছে। অবৈধভাবে আবাদি জমির পাশেই ভাটা তৈরী হওয়ায় ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ভাটার কালো ধূয়ায় পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি নানা ধরনের রোগ বালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১টি বৈধ ভাটা রয়েছে। বাকি গুলো সবই অবৈধ। অবৈধ সব ভাটা গুলো সামষ্টিক অর্থনীতি ও পরিবেশ ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব এনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে চালাচ্ছে ইটের ভাটা, যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া, ঝাউদিয়া, বটতৈল, লক্ষীপুর, জুগিয়া-বারখাদা এলাকার বিভিন্ন ইটের ভাটায় সরেজমিনে কাঠ পুড়তে দেখা গেছে। মজুদ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ কাটা গাছ। এসব ইট ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের ক্ষেতেই।

জনৈক এক ভাটা মালিক গলা জোড় দিয়ে বলেন, আমার কোন কাগজপত্র নাই এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি, ব্যবসা চালাতে কোন সমস্যা হয়না। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করছি। কুমারখালীর ৭টি ভাটায় অভিযান চালানোর পর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাটাগুলো অভিনব কায়দা অনুসরণ করে চলেছে। ভাটা মালিকরা তাদের ক্রয়কৃত কাঠ ভাটার আশপাশের গোপন জায়গায় মজুদ করে রাখচ্ছে। প্রয়োজনে টলি করে কাঠ নিয়ে এসে দ্রুতই ভাটার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। যাতে করে ধরা না পরে।

আরেক ভাটা মালিক জানান, মালিকদের ঐক্য নাই, যে যার মতো ছন্নছাড়া হয়ে ব্যবসা করছে। ইতিবাচক ভাবে পরিবর্তনের বিষয়ে কোন অভিভাবক নেই যে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সবার অবস্থাই পরিবেশ বিপর্যয়ে বেগতিক। তিনি বলেন, ইট পোড়াতে সবাই নির্ভরশীল ফসলের ক্ষেতের মাটি এবং কাটা কাঠের ওপর।

কুষ্টিয়া জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, সকল ইট ভাটা মালিকদেরকে নোটিশ করা হয়েছে তারা যেন অবৈধভাবে বন উজার করে কাঠ দিয়ে ইট না পোড়ায়। তিনি বলেন, ঢাকাতে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেট আসলেই ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কেএস 

Link copied!