গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ০৫:৪৫ পিএম
গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ০৫:৪৫ পিএম
রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ তিন উপজেলায় প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৩২টি ভেড়া। সম্প্রতি ভেড়াগুলো বিতরণের পর অন্তত ৭০টি মারা গেছে।
যারা ভেড়াগুলো পেয়েছিলেন তারা বলছেন, বিতরণ করা হয়েছে অসুস্থ ও হাড্ডিসার ভেড়া। তাই মারা যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের ‘সমতল ভূমিতে বসবাস করা অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও জীবনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় গতমাসে ভেড়াগুলো বিতরণ করা হয়।
ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা এই ভেড়া পেয়েছে।জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় গোদাগাড়ীতে ৪০০টি, তানোরে ৪০০টি এবং বাগমারার ১১৬টি পরিবারের মাঝে ভেড়া বিতরণ করা হয়। মোট ৯১৬টি পরিবারে মাঝে ১ হাজার ৮৩২টি ভেড়া বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় গোদাগাড়ীর ২৬৬টি এবং তানোরের ১৭০টি পরিবারের মাঝে একটি করে বকনা গরু বিতরণ করা হয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর বাগমারা উপজেলায় ভেড়া বিতরণ করা হয়। এরপর ২৮ নভেম্বর গোদাগাড়ীতে এবং ৭ ডিসেম্বর তানোরে ভেড়া বিতরণ করা হয়।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, বাগমারায় প্রায় ৪০টি এবং তানোর ও গোদাগাড়ীতে ১০ থেকে ১৫টি করে ভেড়া মারা গেছে। সবমিলিয়ে ৭০টি হতে পারে। কী রোগে মারা গেছে তা নিশ্চিত হতে একটা মৃত ভেড়া ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাটে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি মৃত ভেড়ার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।
বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার বলাই চন্দ্র সরকার দুটি ভেড়া পেয়েছিলেন। তিনি জানান, ভেড়া বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরদিনই একটি মারা গেছে। আরেকটি ভেড়াও অসুস্থ। ভেড়ার মুখ থেকে লালা ঝরছে। পাতলা পায়খানা করছে। আনার পর থেকে ভেড়া জ্বরেও ভুগছে।
বাগমারার মহব্বতপুর গ্রামের কড়ি রায়ও একটি ভেড়া বাঁচাতে পারেননি। তিনি বলেন, হাড্ডিসার ও অসুস্থ দুটি ভেড়া দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে নেওয়ার পর চিকিৎসা করেও একটিকে বাঁচানো যায়নি। চার দিন পর ভেড়াটি মারা যায়।
উপকারভোগী সবিতা রানী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব অসুস্থ ও হাড্ডিসার ভেড়া দিয়ে গরিবের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।
অসুস্থ ও হাড্ডিসার ভেড়া বিতরণের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, ‘দু-একটা ও রকম থাকতে পারে। এই ভেড়া কেনার সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত নই। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে প্রকল্প চলছে। প্রকল্প শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। ঢাকা থেকে প্রকল্পের ঠিকাদার ভেড়া সরবরাহ করেছেন। এখন যে কিছু ভেড়া মারা যাচ্ছে, সেটা প্রকল্প পরিচালককে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।’
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেনটেচ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজশাহীতে ভেড়া সরবরাহ করে। কথা বলতে প্রতিষ্ঠানের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ডেলিভারি চালানে থাকা ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রকল্প পরিচালক ড. অসীম কুমার দাস বলেন, ঠাণ্ডার সময় এ রকম একটু হতে পারে। সব এলাকায় দু-একটা করে ভেড়া মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় বিতরণ করা ২২টা গরুও মারা গেছে।
তিনি বলেন, গরু ও ভেড়ার ঠিকাদারের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড ১৪দিন। আমি সেটি বাড়িয়ে একমাস করেছি। একমাসের মধ্যে মারা গেলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছবি তুলে পাঠাবেন। যে উপকারভোগীর গরু বা ভেড়া মারা যাবে, তাকে আবারও নতুন করে দেওয়া হবে।
এসএম