কক্সবাজার প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ১১:৩৬ এএম
কক্সবাজার প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ১১:৩৬ এএম
সেন্টমার্টিন থেকে ১৩০০ পর্যটক নিয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ছেড়ে আসা বে ওয়ান জাহাজ ১৪ ঘণ্টা পর কক্সবাজার এসে পৌঁছালো। জাহাজটি রাত ৯টার দিকে গভীর সমুদ্রে আটকে যায়।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে পৌঁছে বে ওয়ান থেকে পর্যটকদের স্থানান্তরিত হওয়া বার আউলিয়া জাহাজটি।
ফেরত আসা যাত্রীরা এ সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। বিশেষ করে নারী পর্যটকরা জানান, শিশু এবং বয়স্ক মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। অনেকে বসার জায়গা না পাওয়ায় ১৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে সমুদ্রযাত্রা করেছেন।
কলকাতা থেকে আসা চিকিৎসক দম্পতি জানান, জাহাজ কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনা আর অসহযোগিতা ছিল। জাহাজের মাত্র ১৫ শতাংশ যাত্রীকে খাবার দেয়া হয়েছে।
তারা বলেন, আগের দিন ভোর ৫টায় তারা ঘাটে আসেন সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য আর পরদিন ভোর ৫ টায় ফিরেছে, সেন্টমার্টিন দেখার সুযোগও হলো না, মাত্র ৪৫ মিনিট দ্বীপে অবস্থান করার সুযোগ হয়েছিল।
ঢাকা থেকে আসা আরেক দম্পতি জানান, সমুদ্র উত্তাল ছিল, এ সময় বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করেনি। সেই সঙ্গে তিনটি আলু সিংগারার দাম রাখা হয়েছে ১০০ টাকা, খিচুড়ির দাম রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা।
অপর এক পর্যটক জানান, তিনি সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছেন কেবিনের, তাকে খাবারও দেয়া হয়নি। তার স্ত্রী জানান, বাচ্চাদের নিয়ে রাতভর সমুদ্রে ভয়াবহ সময় পার করেছি।
ট্যুর অপারেটর জসিম উদ্দিন শুভ প্রশাসনের হেল্প চেয়ে তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের বাঁচান। একদিকে জাহাজে পথে পথে হয়রানি অন্যদিকে বাস মিস করাই মধ্যবিত্ত পরিবারদের কান্না দেখে নিজের চোখের পানি চলে আসে। তারমধ্যে অফিস থেকে বস দিচ্ছে বকা, যেমনি হোক চাকরি বাঁচাতে আগামীকালকে সকাল দশটার মধ্যে অফিসে হাজির হতে হবে। কিন্তু আমরা এখনও সাগরে ভাসছি। দেখার কেউ নেই। নেই কোনো খাবার। দোকানপাট বন্ধ। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও বার আউলিয়া নাম দিয়ে বুকিং নিয়ে দুই শিপের যাত্রী এক শিপ করে অর্থাৎ বে ওয়ান শিপে করে কয়েকদিন ধরে বে ওয়ানকে হাইলাইট করতে যাওয়া আসা শুরু করছে। কোম্পানি তারই ধারাবাহিকতায় কবলে পড়ে ভ্রমণে আসা আজ প্রায় ২ হাজার পর্যটকের বাস মিস হয়েছে। এর দায়ভার কে নেবে, কেউ কি বলতে পারবেন?’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে কর্ণফুলী ক্রুজ লাইনের কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম জানান, জোয়ার ভাটা জনিত কারণে কক্সবাজার থেকে বারো আউলিয়া জাহাজে করে গভীর সমুদ্র থেকে কক্সবাজার ঘাটে যাত্রীদের ফেরত আনতে সময় লেগেছে। এতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি জানান, যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলেই লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়নি। জাহাজে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ছিল।
খাবার সব যাত্রী না পাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সবাইকে খাবার দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম নেয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাহাজের খাবারের দোকান কর্তৃপক্ষ অন্যজনকে ভাড়া দিয়েছে, এখানে জাহাজ কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই।
তিনি জানান, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা তবে দুর্ঘটনা নয়। সব যাত্রী নিরাপদে ফিরেছে।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের কিছু অংশে নাব্যতা সংকটের কারণে জাহাজ চলাচল এ বছর বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুটো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করে পর্যটকদের নিয়ে। তবে প্রায়েই জাহাজ পৌঁছাতে দেরিসহ নানান অভিযোগ শোনা যায় পর্যটকদের কাছ থেকে।
এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ কর্ণফুলী জাহাজ এবং সকাল ৮টা নাগাদ বে ওয়ান সময় ক্রুজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে কক্সবাজার থেকে রওয়ানা করেছে বলে জানা গেছে।
এসএম