ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ১১:২৭ পিএম
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিএনপি নেতা আলী আজমের মায়ের জানাজায় অংশ নেয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাজার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনা।
তবে এ নিয়ে এখন মুখ খুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডান্ডাবেড়ি নিয়ে বিএনপি নেতার মায়ের জানাজা পড়ানো কারাবিধি মোতাবেক হয়েছে, এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
তিনি জানান, প্যারোলে মুক্তির আদেশের আবেদনপত্রের পাশে পুলিশ স্কটের দায়িত্বরত এসআই কামাল হোসেন ‘ডান্ডাবেড়ি প্রয়োজন’ উল্লেখ করে আবেদন করেন। তবে পুলিশ আবেদন না করলেও জেল কোড অনুযায়ী তিনি ডান্ডাবেড়ি লাগাতেন। কারণ, জানাজা থেকে আসামি উধাও হয়ে গেলে দায়-দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তাত। ওই বিবেচনায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া প্যারোলে মুক্তি পাওয়া কোনো আসামিকে এ পর্যন্ত তিনি ডান্ডবেড়ি ছাড়া মুক্তি দেননি।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, পুলিশ শুধু নিরাপত্তা প্রহরায় আসামিকে কারাগার থেকে বাড়িতে আনে এবং জানাজা শেষে ফেরত নিয়ে গেছে। ডান্ডাবেড়ি বা হাতকড়া লাগানো, না লাগানো জেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। এজন্য পুলিশের কোনো দায় নেই।
ডান্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়া আলী আজম কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। তার স্বজনরা জানান, আলী আজমের মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে মারা যান করেন। শেষবারের মতো মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। কিন্তু ওইদিন দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি মেলে বিএনপির এই নেতার। মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে নিজ বাড়ি কালিয়াকৈরের পাবুরিয়াচালা এলাকায় মায়ের জানাজায় উপস্থিত হন তিনি। বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। জানাজা পড়ানোসহ পুরো সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম।
আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তার ভাইকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বলা হয়েছিল কিন্তু পুলিশ খুলে দেয়নি।
জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত মুসুল্লি ও স্থানীয় লোকজন। এ অবস্থায় আলী আজমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, আমার কাছে আবেদন করেছে, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নির্দেশনা সম্বলিত প্যারোলে মুক্তির আদেশ দিয়েছি। এখন এখানে জেলকোড বা অন্য বিষয়ে পুলিশের নিজস্ব সিকিউরিটি নিয়ে যারা কাজ করেন আপনার বরং তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা করাই ভালো।
তিনি বলেন, যেহেতু সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনা (জঙ্গি পালিয়ে যাওয়া) ঘটেছে। জেলকোডে কিন্তু ডান্ডাবেরি পরানোর কথা বলা আছে। তবে এটা জানাজার সময় খুলবে কী না, এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বা নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা তো সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা বলে দিয়েছি, তবে এটা নিয়ে একটা মানবিক বিষয় এসেছে, এছাড়া আইনের কোনো বড় ব্যত্যয় ঘটেনি।
জেলা কারাগারের সুপার বজলুর রশিদ বলেন, আসামি জেলের বাইরে গেছে, তাই নিরাপত্তার জন্য ডান্ডাবেরি দিয়েছি। আমার কাছে ওয়ারেন্টে দাগী-নির্দাগী কোনোকিছু বলার থাকে না। আমি শুধু তাদের সেকশনগুলো (ধারা) দেখি। সেকশনে আছে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩, ৪, ৫ ধারা। বিস্ফোরক আইনের মামলা আমি কী ছোট করে দেখবো? আমি কোন মামলা ছোট করে দেখবো? ৩৮০ ধারার মামলা, গরুর চুরি মামলা, আমি সেটাও আমি ছোট করে দেখতে পারি না। দেশের জঙ্গিরা কারাগারে থাকাবস্থায় আমাদের সঙ্গে মধুর ব্যবহার করে আবার যখন ঘটনা ঘটায় তখন আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়, জবাবদিহিতা আমাদেরই দিতে হয়। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। জেল কোডে ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা বলা আছে।
উল্লেখ্য গত ২৯ নভেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ককটেল হামলা বিস্ফোরণের অভিযোগে একটি মামলা হয়। মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করেন বাদী আবদুল মান্নান শেখ। ওই মামলায় গত ২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন আলী আজম। তারপর থেকেই তিনি কারাগারে বন্দি আছেন।