উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ০৪:২৮ পিএম
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ০৪:২৮ পিএম
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। দাম ও চাহিদার উপর নির্ভর করে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চালের ৪১ হাজার ৬০ জন কৃষক চলতি অর্থ বছরে সরিষা চাষে নতুন মাত্রায় যাত্রা শুরু করেছে। স্থানীয়ভাবে তেলের চাহিদা পুরণসহ সরিষার শুকনো গাছগুলো জ্বালানির কাজে সহায়তা করবে বলে আশা করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। ইতোমধ্যে কৃষকের স্বপ্ন বুননসহ হলুদ ফুলে সেজেছে সরিষা চাষের জমি এবং সে জমিতে মৌ মৌ গন্ধে চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়ছে। পথচারিরা সে গন্ধে মুগ্ধ হচ্ছেন এবং মৌ মাছিরাও মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে ৬১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিলো এবং কৃষক কিছুটা লাভবান হয়েছিলো। চলতি অর্থ বছরে ৭১০ হেক্টর জমি সরিষা চাষের জন্য নির্ধারাণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১.৮২ টন। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৯২.২০ টন। এখানে প্রদর্শনী রয়েছে ৮০ টি জমিতে। এ উপজেলাটি ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদী বেষ্টিত হওয়ায় প্রতি বছরই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক কোনো কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সে দিকটি বিবেচনা করে কৃষি অধিদপ্তর সারা দেশের ন্যায় এই উপজেলার কৃষকদের প্রণোদনা স্বরুপ ৪১হাজার ৬০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার বীজ দিয়েছে। প্রতিজন কৃষকের জন্য ৩৩ শতক জমি নির্ধারণ করে উপশী জাতের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষক বরাবর বোরো ও আমন এই দুটি ধান চাষেই বেশি আগ্রহী কিন্তু সমসাময়িক সময়ে উৎপাদনের সাথে ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিগত বছরগুলোতে যে যৎ সামান্য সরিষা চাষ হতো তা ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর বুকের উপর জেগে ওঠা চরের উপর হতো।
এ বছর সর্ব পর্যায়ের জমিতেই সরিষার চাষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে এমনটাই আশা করছে এ অঞ্চলের কৃষক।
উলিপুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ী গ্রামের কৃষক হাছান আলী জানান, দীর্ঘ সময় বিদেশে ছিলাম, কয়েক বছর হলো দেশে অবস্থান করছি। কৃষির সাথে আদিম পরিচয় থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারিনি। গত বোরো মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন, কারেন্ট ভাইরাসের আক্রমনে ৩দিনের মধ্যেই পুরো জমির ধান গাছ পুড়ে গেছে এ কথাও জানালেন ওই কৃষক। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ব্লোক সুপারভাইজার সাইদুর রহমান তাকে সরিষা চাষের পরামর্শ দেন সে পরামর্শ মোতাবেক সরিষা চাষ করেন। একই কথা জানান ওই গ্রামের কৃষক জালাল, শাহজাহান ও মজিবর।
চরাঞ্চল ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ব্লোক সুপারভাইজারের আওতায় ৭০-৮০ জন কৃষক সরিষা চাষ করেছেন। স্বল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ের ফসল হওয়ায় কৃষিবীদগণ আশা করছেন, দিন দিন সরিষার উৎপাদন বাড়বে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক আলতাফ, বজরা ইউনিয়নের কৃষক নুরনবী, গুনাইগাছ ইউনিয়নের কৃষক ভবেষ জানালেন, দাম ভালো পাওয়ার আশায় বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রণোদনায় সরিষা চাষ করেছি। নিজেদের তেল ও জ্বালানি চাহিদা পুরণ করে রপ্তানির স্বপ্নও দেখছেন। ইতোমধ্যে কোনো কোনো সরিষার গাছে, দানা আসতে শুরু করেছে।
তারা আরও জানান, বিঘা প্রতি ৫-৬ মন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন। কুয়াশা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সরিষার ক্ষতি হতে পারে কি না এই বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা সাহেবের আলগার ব্লোক সুপারভাইজার সাহেদুর রহমান জানান, ৮০-৯০ দিনের প্রজেক্ট সরিষা চাষ। যে পরিমান কুয়াশা পরেছে তাতে গাছ, ফুল ও ফলের তেমন ক্ষতি করতে পারবে না, এটিই সরিষা চাষের জন্য উত্তম সময়। তবে দীর্ঘ সময় কুয়াশা চলতে থাকলে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে কৃষকের দাড়ে দাড়ে গিয়ে সুপরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের কৃষকদের সরিষা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে তেলের চাহিদা পুরণসহ ব্যয়ভার কমানো এবং নিরাপদ তেল খেয়ে স্বাস্থ্য সম্মত থাকা।
তিনি আরও জানান, কৃষককে আধুনিকভাবে সকল প্রকার চাষাবাদ করার জন্য সব সময় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কেএস