মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৬:৩৯ পিএম
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৬:৩৯ পিএম
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে এসে এক তরুণী (২৬) নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই তরুণী বাদী হয়ে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে মির্জাগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের মুন্সিরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের শাখায়েত হোসেনের ছেলে মাহাবুব আলম আলমীর`র (৩২) সঙ্গে বিয়ের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে তার বাড়িতে অবস্থান নেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সায়েমখোলা গ্রামের ওই তরুণী (২৬)। এ সময় তাকে আলমগীর, তার বাবা-মা, বোন ও ভগ্নিপতি মিলে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এতে তিনি আহত হলে স্থানীয়দের সহায়তায় মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। অভিযুক্ত প্রেমিক আলমগীর বর্তমানে এনএসআই এর ভোলা জেলা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বোন স্ব-পরিবারে ঢাকায় বসবাস করেন। ২০১১ সালে নির্যাতিতা তরুণী বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার সময় বাস গাড়িতে বসে মাহাবুব আলম আলমীর`র সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হয় এবং পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। তাদের প্রেমের সম্পর্ক গভীর হলে তরুণী প্রায় সময়ই প্রেমিক আলমীরকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে সে (আলমগীর) তাকে বিবাহ করার কথা বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয় এবং বলে পরবর্তীতে উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করে বাড়ীতে নিয়ে যাবে। এরপর দীর্ঘ ১১/১২ বছর যাবৎ তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলতে থাকে। এর মধ্যে ২০২০ সালে এনএসআইতে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে চাকরি পায় আলমগীর। চাকরি পাওয়ার পর হঠাৎ ওই তরুনীর সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় অভিযুক্ত আলমগীর। পরবর্তীতে একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও না পেয়ে বাড়ীর ঠিকানা সংগ্রহ করে আলমীরের বাড়িতে চলে যান ওই তরুণী। তখন স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে এবং পরবর্তীতে উভয় পক্ষের লোকজনের সম্মতিক্রমে তাদেরকে বিবাহ দিবে বলে আস্বস্থ্য করলে সে (তরুণী) নিজ বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে আলমগীর`র পক্ষ থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত ওই তরুণীর সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। ঘটনার ২/৩ দিন পূর্বে আলমগীর`র ভগ্নিপতি বাদশা ওই তরুণীকে ফোন করে আলমগীর তাকে ২/৩ দিনের মধ্যে বিবাহ করবে বলে জানান।
এই খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) আবারও আলমীরের বাড়িতে আসেন ওই তরুণী। তখন তাকে দেখে আলমগীর ও তার পরিবারের লোকজন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে সে বসত ঘরে উঠতে গেলে তারা তাকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ীর সামনে রাস্তায় নিয়ে এসে লাঠি দিয়া এবং এলোপাথারিভাবে কিল-ঘুষি মেরে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এ সময় তারা আবারও তাদের বাড়িতে আসলে তাকে খুন করে লাশ গুম করবে বলে হুমকী দেন।
নির্যাতিত ওই তরুণী বলেন, ১১/১২ বছর যাবত আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে। আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নানাভাবে ব্যবহার করে আসছিলেন আলমগীর। এমনকি সে আমাকে নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও করেছে। আজ আমি নিরুপায় অথচ আমাকে স্বীকার না করে উল্টো নির্যাতন করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে মাহাবুব আলম আলমগীরকে মুঠোফোনে কল করে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়েই লাইনটি কেটে দেন।
আলমগীর`র বাবা সাখায়েত হোসেন বলেন, আমার ঘরে কোন মেয়ে আসেনি এবং আমরা কাউকে মারধরও করিনি।
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেএস