Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বই ছাড়াই চলছে নতুন বছরের ক্লাস!

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি

জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৩:২৭ পিএম


বই ছাড়াই চলছে নতুন বছরের ক্লাস!

গত ১৩ বছর ধরে বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণ করে আসছে সরকার। বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেওয়া একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গতবছর ও এবছর সেই ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি। এ বছর শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ নতুন বই এখনো হাতে পায়নি। পুরাতন বই দিয়েই শিক্ষকরা কোনো রকম চালিয়ে নিচ্ছেন ক্লাস।

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার চারটি স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানের কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

উপজেলার লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন বছর শুরু হলেও এখনও শিক্ষার্থীরা স্কুলে সেভাবে আসা শুরু করেনি। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয় চাকমা বলে, আমি নয়টা নতুন বই পেয়েছি। স্যাররা বলেছেন, অন্যান্য বইগুলো পেলেই আমাদের দেওয়া হবে।

বাংলা, ইংরেজি, গণিত সহ আরো কয়েকটি বই পেয়েছে জানিয়ে এই শিক্ষার্থী আরও বলে, বইয়ের কাগজ খুব একটা ভালো না। মনে হয় একটু পানি পড়লে বা টান পড়লেই ছিড়ে যাবে।

একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শামীম বলে, আমি এখনো স্কুল থেকে এবছর নতুন বই পায়নি। গত বছরের পুরাতন বই নিয়েই ক্লাস করছি।

গাউসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসানের বাবা আব্দুর রহমান বলেন, ছেলের তিনটা বই দেওয়ার কথা। সেখানে এখনো একটা বইও পায়নি। স্কুল থেকে বলেছে পাওয়া মাত্রই দিয়ে দেবে।

এক শিক্ষক বলেন, আমরা আপাতত পুরাতন বই দিয়ে ক্লাস নিচ্ছি। সাধারণ ধারণা দিচ্ছি। সব বই হাতে পেলে পুরোদমে ক্লাস নেয়া শুরু করব।

এই দুই স্কুলের মতো একই চিত্র মাইনীমূখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। এই দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে গেছে তিনটি করে বই। গাউসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ মায়ের সাথে স্কুল থেকে ফিরছিল। কাঁধে ব্যাগ। জানতে চাইলে দ্বিতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর মা বলেন, ওর বড় এক ভাইয়ের দুইটা বই এনে দিছি। আর স্কুল থেকে কোনো বই পায়নি।

উপজেলার অন্যান্য স্কুলের চিত্রও প্রায় একই। প্রাথমিকের এক শিক্ষিকা বলেন, আমাদের স্কুলে প্রথম দিন প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনো বই দিতে পারিনি। তবে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সমাজ, বিজ্ঞান ও ধর্ম এই বইগুলো দিয়েছে। প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা পেয়েছে সবগুলো বই।

বইয়ের এই সঙ্কট নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। অনুমেয় ছিল প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে না শতভাগ নতুন বই।

আবার কাগজের মানে সরকার কিছুটা ছাড় দিলেও একেবারেই নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে বলেও কেউ কেউ জানান।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার এমকে ইমাম উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত ৩য়, ৪র্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৩টি করে, উপজাতি শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার বই ও প্রাক প্রাথমিকের বই উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিয়েছি। ১ম, ২য় ও অন্যান্য শ্রেণির বই আসা মাত্র শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিবো।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানায়, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির বই প্রদান করা হয়েছে। ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ৩টি বই ব্যতীত অন্য কোন বই এখনো আসেনি। এ পর্যন্ত আশি শতাংশ বই দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এদিকে এবতেদায়ের সম্পূর্ণ বই ও দাখিলের ৬ষ্ঠ শ্রেণি ব্যতীত সকল বই দেওয়া হয়েছে। তবে জানা গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন শ্রেণির বই পায়নি শিক্ষার্থীরা।

কেএস

Link copied!