সাকিব আলম মামুন, লংগদু (রাঙামাটি)
জানুয়ারি ৯, ২০২৩, ০২:১৭ পিএম
সাকিব আলম মামুন, লংগদু (রাঙামাটি)
জানুয়ারি ৯, ২০২৩, ০২:১৭ পিএম
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। ওই মাঠে খণ্ড খণ্ড হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। ফসলের মাঠে হলুদ সরিষার এমন দৃশ্য দেখা যায় রাঙামাটির লংগদু উপজেলায়। এবার সরিষার ফলনে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলের জমিতে তেমন ফসলের বেশি আবাদ হতো না। সরকারের কৃষিবান্ধব নানা পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে এই উপজেলার জমিতে চাষ হচ্ছে তিন ফসল। আমনকাটার পরেই জমিগুলোতে আবাদ হচ্ছে সরিষা। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
সরিষা মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কিছুদিন বাদেই ঘরে উঠবে সরিষা। বছর খানেক আগেও পানি সংকটসহ নানা কারণে বোরো ধান কাটার পর দীর্ঘ সময় পড়ে থাকত পাহাড়ি জমি। তবে এখন পড়ে থাকা সেসব জমিতে এখন চাষ হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের সরিষা।
উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের বামেছড়ায় প্রায় শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষক নওমিত্র চাকমা। তিনি বলেন, আগে এই জমিতে শুধু ধান চাষ করতাম। পরিত্যক্ত হিসেবে এই জমি পড়ে থাকতো। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই জমিতে সরিষার চাষ করি। এই জমিতে আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি ভালো ফসল হয় তাহলে একলাখ টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারব।
আরেক কৃষক বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি ফেলে রাখতাম। এখন ফেলে না রেখে সরিষার চাষ করছি। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমে ধানের চাষ করব।
লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হেক্টর জমি। সেখানে অর্জিত হয়েছে প্রায় ৫০ হেক্টরের অধিক জমি। এবার ৩৬০ জন কৃষকের মাঝে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় আগাম সরিষা বীজ (বারি-১৪, বারি-১৭) ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে উপজেলার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। প্রণোদনার বাহিরে আগ্রহী হয়ে উপজেলার আরো ২০জন কৃষক এবার সরিষা চাষ করেছেন। অনেক জায়গায় বাম্পার ফলনও হবে বলে ধারণা করছেন তারা।
উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের সহায়তা করা হয়েছে। সরকার এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে বিনামূল্যে প্রাপ্ত বীজ এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষক এসব পেয়ে পতিতজমি চাষ করার আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় চলতি বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে। কৃষক যদি কাঙ্খিত ফসল পায় তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। এছাড়াও চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পতিত জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এতে অনেক বেশি সরিষা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি বলেন, উপজেলায় আমন ধানের চাষ বেশি হয়। আর আমন ধানের পর পরই বোরো ধানের চাষ হয়। পানির অভাবে বোরো ধান করা হয় না। ফলে সেসব জমি সাময়িক পতিত থাকে। সরকারের পরিকল্পনা অনুয়ায়ী সাময়িক পতিতজমিতে যদি সরিষার আবাদ করা হয় সেক্ষেত্রে চাষিদের বড় ধরণের লাভ হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছি।
এআরএস