জানুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৮:২১ পিএম
চার বছর আগে সম্পদ বলতে তেমন কিছু ছিল না হিরো আলমের। তখন ব্যাংক হিসাবে এক হাজার টাকা ছিল। আর ছিল ২১ শতাংশ কৃষিজমি, ৮৭ হাজার টাকা মূল্যের একটি পুরোনো মোটরসাইকেল, আড়াই লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস পণ্য এবং স্ত্রীর এক ভরি স্বর্ণালংকার। ওই সময় তার আয়ের উৎস ছিল কৃষি খাত থেকে আসা ৬ হাজার টাকা ও অভিনয় থেকে আসা ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এর বাইরে নিজের বাড়ি-গাড়ি কিছুই ছিল না।
তবে সময় বদলেছে। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নির্বাচনী মনোনয়নের সঙ্গে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর হলফনামায় তার বর্তমান সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে। চার বছরের ব্যবধানে হিরো আলম হয়েছেন কোটিপতি।
কিনেছেন কয়েক লাখ টাকার প্রাইভেট কার, ৯ শতক জমি কিনে বানিয়েছেন বাড়ি। তার ব্যাংক হিসাবে আছে ৩০ হাজার টাকা। কৃষিজমি কিনেছেন ৫০ শতাংশ। এছাড়া তার স্ত্রী হয়েছেন ১০ ভরি স্বর্ণের মালিক। আছে ৫৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর হলফনামায় হিরো আলম এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় তিনি বলেছেন, তিনি স্বশিক্ষিত। আর তার পেশা ব্যবসা।
হিরো আলম ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র ও হলফনামার সঙ্গে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহে অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস বিবরণী দাখিল করেছিলেন। সেখানে তিনি নির্বাচনে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে নিজের অভিনয় ও ব্যবসা থেকে ৫ লাখ এবং শ্বশুর, ফুফা ও ভগ্নিপতির কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা ধার করে নির্বাচনী ব্যয় মেটানোর কথা জানিয়েছিলেন। তবে এবারের নির্বাচনী ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে জানা যায়নি।
আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘সবাই জানে আমার কোনো কালোটাকা নেই। স্টেজ শো করে উপার্জন করি। চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও অভিনয় করি। নাটক, চলচ্চিত্র ও মিউজিক ভিডিও নির্মাণের ব্যবসা করি। ইউটিউব থেকে আয় করি। এসব আয় থেকেই সৎভাবে জীবন যাপন করছি। একটু একটু করে সঞ্চয় জমিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছি। হলফনামায় সম্পদের যে তথ্য দিয়েছি, সবই সৎভাবে উপার্জিত। কোনো অসৎ রোজগারের অর্থ আমার নেই।’
এদিকে রোববার দুপুরে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে ন্যূনতম ১% ভোটারের স্বাক্ষরসহ সমর্থনসূচক তালিকায় গরমিল থাকার কথা জানিয়ে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হিরো আলম বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করবো। সেখানে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টে যাবো।
এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়ার প্রত্যন্ত এরুলিয়া গ্রামে একসময় সিডি বিক্রি করতেন আশরাফুল আলম। সিডি যখন চলছিল না, তখন কেব্ল সংযোগ ব্যবসা শুরু করেন। সেই ব্যবসার সুবাদে তিনি মিউজিক ভিডিও তৈরি শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম। ইউটিউবে প্রকাশ করা তার নিজস্ব ভিডিওগুলোও অনেক জনপ্রিয়। ভিডিওগুলোর নির্দেশনাও দেন তিনি। ভিডিওগুলোর মূল চরিত্রে তিনি নিজে অভিনয় করেন। জন্ম দিয়েছেন বহু আলোচনা-সমালোচনার।
কেএস