Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

এক অজবালার জীবন কথা

আল-আমিন, নীলফামারী

আল-আমিন, নীলফামারী

জানুয়ারি ১২, ২০২৩, ০২:৫৯ পিএম


এক অজবালার জীবন কথা

হাতে লাঠি কাঁধে ভিক্ষের ঝুলি। বয়স ৮১ ছুঁই ছুঁই। জীবনের ৮০ বছর যথারীতি কেটে গেছে। চোখে ঠিকমত দেখতে পান না এখন। এক সময় মেয়ে ও স্বামী সংসার নিয়ে আনন্দে ভরপুর ছিল তার পরিবার। কালের বিবর্তনে সবই ওলট-পালট হয়ে গেছে। একাকিত্ব, হাহাকার, আর্তনাদ সবটাই গ্রাস করেছে তাকে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরনে পুরোনো বিবর্ণ ধুসর সাদা কাপড়ের ধুতি। বেশভুষায় বোঝা যায় কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করেন। মেয়ের বিয়ে দেয়ার  কিছুদিন পরেই স্বামী হাঁপানী রোগে মারা যায়। মেয়ের জামাই মাঝে মধ্যে যে সহযোগিতা করত বেশকিছু দিন ধরে সে মেয়ে ও জামাই দুজনেই জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখন সেও বন্ধ। বয়সের ভারে ও বার্ধক্য জনিত কারণে কাজে ডাকেনা প্রতিবেশীরা। সরকারি সুযোগ সুবিধা বলতে জুটেছে বিধবা ভাতা। সেই টাকায় চলে খাওয়া দাওয়া কাপর চোপর, আর ঔষধ কেনায় কুলাতে পারেন না। নিজের নেই কোন জমি জমা। অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে করছেন বসবাস। সে ঘরেই একপাশে থাকার বিছানা আর অন্যপাশে রান্না করার চুলা ও পাতিল, পাশেই, ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে রান্নার কিছু লাকড়ি। ঘরের টিনের চালা ও বেড়ায় চারদিক অসংখ্য (ছিদ্র) ফুটা সেগুলো আটকানো আছে তারেই ব্যবহৃত পুরানো ছেড়া নোংরা সাদা কাপড়ে। সামান্য বৃষ্টিতে পানিপরে বিছানা ভিজে যায়। ঘরের বেড়ার ফুটা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে যে কারণে ঘুমাতে পারেন ঘরে। কি ঘুম কি জেগে থাকা এ ভাবে কাটে তাঁর রাত। পানি পানের নেই কোন টিউবওয়েল, না আছে পায়খানা। যুগ যুগ ধরে এ ভাবেই চলছে তার  জীবন। কথা গুলো বলছি ডোমার উপজেলার হরিনচড়া ইউনিয়ন হংসরাজ গ্রামের মৃত ইলাম রায়ের এর (ভিক্ষা বৃত্তি করা) স্ত্রী অজবালার কথা।

অজবালা ছল ছল চোঁখে কান্না জরিত হৃদয়ে বলেন, হামার প্রধানমন্ত্রী শেখের ব্যটি গরীব মানুষোক পাকা ঘর দিছে মোক একটা ব্যবস্থা করিদেও বাবা এমন ঠান্ডায় আমি বোধ হয় আর বাজবো না। এই শেষ বয়সে এসে খেয়ে হোক বা না খেয়ে হোক দিনের শেষে নিশ্চিন্তে নিজ ঘরে গিয়ে ঘুমাতে পারি। পৃথিবীতে আমাকে দেখার কেউ নেই। মারা গেলে কি হবে যানি না। আর কেই না থাকায় নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচাতে নিয়েছি ভিক্ষা বৃত্তি পেশা। কিন্তু করতে চাইনি, নিরুপায় হয়ে করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি পাকা ঘর চাই। যেন সারাদিনের ক্লান্তির শেষে নিরবিঘ্নে নিজ বাসস্থানে গিয়ে ঘুমাতে পারি। আমার একটা আশ্রয় চাই। আমার হয়নি তালিকা, শুনেছি এলাকায় অনেক মানুষ পাকা ঘর পাইছে। আমাক একটি ঘর দেন বাবা এমন আকুতি বাব বার জানান।

সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল রানা বলেন, আমার নির্বাচিত হওয়ার এক বছর মাত্র। এখন ও কোন ঘরের বরাদ্দ পাইনি। তবে বরাদ্দ পেলে এমন মানুষের অগ্রাধিকার সবার আগে থাকবে।

জানতে চাইলে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি বলেন ব্যক্তিকে আবেদন করতে বলেন এবং ঘরের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

কেএস 

Link copied!