নেত্রকোনা প্রতিনিধি
জানুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০৯:০৫ পিএম
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
জানুয়ারি ১৮, ২০২৩, ০৯:০৫ পিএম
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের শরীফ মিয়া (২২) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় কারাগারে থাকা আসামি মাজহারুল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
মাজহারুলের ভাবির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল শরীফের। এ ঘটনার জেরে শরীফকে হত্যা করে মাজহারুল। এ বিষয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে মাজহারুল।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম।
গত ১০ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার জয়পুর গ্রামে বাড়ির পাশে শরীফ মিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনার দুইদিন পর শরীফের বাবা জামরুল ইসলাম অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে থানায় মামলা করেন।
পরে এ ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নামেন মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান। ঘটনার ৩৭দিন পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন তিনি।
ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, কোন স্বাক্ষী প্রমাণ না থাকায় এ ঘটনা তদন্তে দক্ষতা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে বেশ কয়েক জনকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে এক নারীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জয়পুর গ্রামের মাজহারুল ইসলাম নামে এক যুবককে আটক করা হয়। পরে এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদলাতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাবাদের জন্য মাজহারুলকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হলে হত্যার বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি। পরে কারাগারে মাজহারুলের সাথে তার মা দেখা করতে গিয়ে নানা কসম দিয়ে হত্যার বিষয়ে জানতে চান। এ সময় মাজহারুল তার মায়ের কাছে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ খবর পরিদর্শক মো. শফিকুজ্জামানের কানে পৌঁছলে মাজহারুলকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার বিষয় স্বীকার করে মাজহারুল। পরে আদালতে হাজির করলে স্বীকারোক্তি দেয় মাজহারুল।
মাজহারুলের বরাত দিয়ে ওসি জানান, মাজহারুলের ভাবির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল শরীফের। এ ঘটনা মাজহারুলের চোখে ধরা পড়ে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়াও হয়। এতে একে অপরের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। এরই জেরে ঘটনার কয়েকদিন আগে একটি দা বানিয়ে এনে বাড়ির পাশের একটি খেতে লুকিয়ে রাখে মাজহারুল। ঘটনার রাতে শরীফকে ভাবির ঘর থেকে দৌড়ে বের হতে দেখে মাজহারুল। পিছু নিয়ে বাড়ির সামনে খেতে গিয়ে ধরে শরীফকে। এ সময় শরীফ তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তখন লুকিয়ে রাখা দা বের করে গলায় কোপ দিয়ে শরীফকে হত্যা করে মাজহারুল। পরে বাড়ি গিয়ে স্বাভাবিকভাবে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমেয়ে পড়ে মাজহারুল।
পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুজ্জামান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ, মোবাইলের কললিস্ট পর্যালোচনা, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা দক্ষতায় কাজে লাগিয়ে এ মামলার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এদিকে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কোন স্বাক্ষী প্রমাণ না থাকায় এ হত্যার রহস্য উদঘাটন কঠিন কাজ ছিল। পরিদর্শক শফিকুজ্জামানের বিচক্ষণতায় এ মামলার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর রাতে উপজেলা জয়পুর গ্রামে বাড়ির পাশে খেতে শরীফের গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। স্থানীয়রা হত্যার রহস্য উন্মোচনে মানববন্ধন করে। এ ঘটনায় প্রতিবেশী মাজহারুল ইসলাম নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে এ মামলায় গ্রপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। মাজহারুল ইসলাম জয়পুর গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
কেএস