Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪,

বিষমুক্ত শুটকি নিয়ে আশাবাদী পিরোজপুরের ব্যবসায়ীরা

পিরোজপুর প্রতিনিধি

পিরোজপুর প্রতিনিধি

জানুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০৩:৩৫ পিএম


বিষমুক্ত শুটকি নিয়ে আশাবাদী পিরোজপুরের ব্যবসায়ীরা

পৌষ মাস একটু সামনে এগোলেই কুয়াশায় আটকে ধরে। সেই কুয়াশায় সকাল বেলা ঢেকে থাকে কঁচা নদী। নদীটি ২টি উপজেলাকে ২ ভাগে বিভক্ত করেছে। এক পাড়ে সদর উপজেলা এবং এক পাড়ে ইন্দুরকানী উপজেলা। সদর উপজেলার পাড় ধরে একটু আগালেই নাকে ভেসে আসে শুঁটকি মাছের গন্ধ। যা আসছে পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের চিথলিয়া এলাকার শুঁটকিপল্লি থেকে। তবে এই পল্লীটি স্থায়ী না হওয়ায় ভালো নেই সেখানকার উৎপাদনকারীরা। তবে সরকারী উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদিত বিষমুক্ত এ শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এই শুঁটকি উৎপাদনে আরও বেশি মুনাফা করা যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুর সদর উপজেলায় কঁচা নদীর তীরেই অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পাড়েরহাট বন্দর। স্থানীয় ও আশেপাশের বেশিরভাগ জেলেই মাছ ধরে বিক্রি করতে নিয়ে আসে এ বন্দরে। তবে শুটকি পল্লীটি গড়ে উঠেছে নিজ উদ্যোগে। ১৫-২০ বছর ধরে চলে সাধারণত ছুড়ি, কোড়াল, হাইতা, মর্মা, চিতল, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলা, লইট্যাসহ ৩০/৩৫ প্রজাতির মাছকে শুঁটকি করার প্রতিযোগিতা। এখানে কার্তিক থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত এই শুঁটকি কার্যক্রম বেশি চলে। শীত থাকলেই শুঁটকির মান ভালো থাকে। বেশি গরম পড়লে শুঁটকির মান নষ্ট হয়ে যায়।

শুঁটকি উৎপাদনকারী আব্দুর রব বলেন, প্রায় ২০০ বছর ধরে পাড়েরহাটে চলছে এ শুঁটকি ব্যবসা। সাধারণত কোরাল, হাইতা, মর্মা, ছুরি, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলা, চিতল ও লইট্টাসহ ৩৫ প্রজাতির মাছ শুঁটকি করা হয় এখানে। প্রতিটি মাছ শুকাতে অন্তত পাঁচ দিন সময় লাগে। ছুরি মাছ শুকাতে ১০ দিন ও কোড়ালসহ বড় মাছ শুকাতে লাগে ১৫ দিন। বিভিন্ন প্রজাতির এই শুঁটকি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় ভিন্ন ভিন্ন দামে। শীত মৌসুমে এসব প্রজাতির মাছ বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে বেশি।

স্থানীয় সওদাগর আকিসুর ব্যাপারী বলেন, আমাদের এই শুঁটকির চাহিদা বেশি কারণ শুঁটকি করতে আমরা কোন কীটনাশক ব্যবহার করি না। আমরা শুধু লবণের মাধ্যমে মাছ শুঁটকি করে থাকি। তবে শীতে শুঁটকির মান ভালো থাকে। বেশি গরমে শুঁটকির মান নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে গরমে কেউ শুঁটকি করেন না। মাছভেদে প্রতি কেজি শুঁটকি ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

আব্দুস সালাম নামের এক শ্রমিক বলেন, আমি এখানে গত ছয় বছর ধরে কাজ করছি। আমাদের শুঁটকিতে কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার হয় না। মাছ কেটে লবণ দিয়ে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় শুকিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। এজন্য এখানকার শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশায় ৫-৬টি বেডে শুঁটকি তৈরি করা হয়। যেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এখানে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। সামান্য লবণ ব্যবহার করে তৈরি এখানকার শুঁটকি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করে থাকে। এখানে একটি প্রজেক্ট গ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে উন্নত কলা-কৌশল ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে আরও ভালো শুঁটকি তৈরিতে তারা অবদান রাখবে। পরবর্তীতে এই শুঁটকি আমরা বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হব।

কেএস 

Link copied!