জানুয়ারি ২২, ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম
দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা।
রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে এই আখেরি মোনাজাত শুরু হয়, চলে দীর্ঘ ২৯ মিনিট। যে যেখানে দাঁড়িয়ে বা বসেছিলেন সেখান থেকে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে কান্নায় বুক ভাসান। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে।
আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বাদ আসর পাকিস্তানের ভাই হারুন কুরেশীর আম বয়ানে মধ্য দিয়ে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে গত ১৮ জানুয়ারি থেকেই দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমার ময়দানে আসতে থাকেন। গত পাঁচ দিন ধরেই দলে দলে ময়দানে আসতে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা। ধর্মের টানে, আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের আশায়, আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী ও আমলের টানে মুসল্লিদের এই আগমন।
তাবলীগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিবছর দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি সমবেত হন। এখানে দুনিয়া ও আখেরাত নিয়ে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় মাওলানারা বয়ান করেন। মনোযোগ সহকারে তা শোনেন ময়দানে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা। এখানেই চলে তাদের রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম।
এদিকে আখেরি মোনাজাতের দিন রোববার (২২ জানুয়ারি) সকাল থেকে গাজীপুর, ঢাকাসহ আশপাশের জেলা ও অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকেন। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে অংশ নেন আখেরি মোনাজাতে।
পুরুষের পাশাপাশি আশপাশের সড়ক ও খালি জায়গায় বসে বিভিন্ন বয়সের নারী ও শিশুরাও অংশ নেয় আখেরি মোনাজাতে। সকাল থেকে আসা মুসল্লিরা ময়দানে জায়গা না পেয়ে সড়ক ও খালি জায়গায় পত্রিকা, চট, পাটি, পলিথিন, ত্রিপল বিছিয়ে বসে আখেরি মোনাজাতের শরিক হন। এছাড়াও বিভিন্ন যানবাহনের ছাদ, বাড়ি ও কলকারখানার ছাদ, তুরাগ নদে নৌকায় বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
আখেরি মোনাজাতের দিন (২২ জানুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করেন মাওলানা মোরসালিন। পরে তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আশরাফুল। এরপর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব ইজতেমা ও আখেরি মোনাজাত ঘিরে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা। র্যাব, পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন, গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন। মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা ও র্যাবের হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেয়া হয় ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায়। এদিকে রাত থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও কামারপাড়া সড়কসহ আশেপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
এবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে আসা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৬ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে গত রোববার (১৩ জানুয়ারি) আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। পরে রোববার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারী দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ। সকালে বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের উদ্দেশে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন কাকরাইলের সুরা সদস্য ক্কারী মোহাম্মদ জোবায়ের। আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান, পরে তা বাংলায় অনুবাদ করেন আবদুল মতিন। আর আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে।
কেএস