নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
জানুয়ারি ২২, ২০২৩, ০৩:৩৭ পিএম
নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া
জানুয়ারি ২২, ২০২৩, ০৩:৩৭ পিএম
কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের অর্থ অত্মসাতসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করতে এসে খোদ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে দুইদিন ধরে কুষ্টিয়া এবং পাশের মেহেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেরিয়েছেন তদন্ত টিমের সদস্যরা। দুই জেলার দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণই শুধু নয়, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিমকে ভুরিভোজও করিয়েছেন। কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটে আলোচিত এ ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই মোছাঃ কাঞ্চন মালার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি চলে আসছে। কাঞ্চন মালার স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে এর আগে শিক্ষার্থীসহ প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা বিক্ষোভ করাসহ অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে এর আগে দুইবার তদন্ত হলেও অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন কাঞ্চন মালা। ইনচার্জের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সামগ্রীসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শারীরিক লাঞ্ছনাসহ অসদাচরণ, প্রতিষ্ঠানের ৩০ সিটের কোচ ব্যবহার করে নিয়মিত নিজ বাড়ি মেহেরপুরে যাতায়াত, অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর দেওয়া, অবৈধভাবে পরিবার নিয়ে হোস্টেলে বসবাস করা, পছন্দের শিক্ষকদের পরীক্ষার ডিউটি ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার সুযোগ দেওয়া, বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিজ বাড়ি মেহেরপুর নিয়ে যাওয়াসহ ১৩টি অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষিকা মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) সুলতানা পারভীনকে আহ্বায়ক, খুলনা নার্সিং কলেজের প্রভাষক লীলাবতী বিশ্বাস এবং ঢাকা নার্সিং কলেজের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর মোঃ খোরশেদ আলমকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়।
ওই কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার জন্য বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে তিন সদস্যের তদন্ত টিম কুষ্টিয়ায় আসেন।
প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, তদন্তকালে অভিযোগকারীদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন তদন্ত টিমের সদস্যরা। দুপুরে প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই তদন্ত টিমের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন অভিযুক্ত ইনচার্জ কাঞ্চন মালা। সাদা ভাত, মুরগি ও খাসির মাংস, রুই, গলদা চিংড়ি, ছোট মাছ, কয়েক রকম ভর্তা, দই-মিষ্টি রাখা হয় আপ্যায়নের জন্য। তদন্ত টিমের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অন্য স্টাফরাও এই মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
মধ্যাহ্নভোজ শেষ হলে বিকেলে ইনচার্জ কাঞ্চন মালাকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত টিমের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানের কোচে চড়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের আখড়া বাড়ি পরিদর্শনে যান। সেখানে কাঞ্চন মালার আতিথেয়তায় তদন্ত টিম আখড়া বাড়ি পরিদর্শনসহ লালন একাডেমির শিল্পীদের গান উপভোগ করেন। পরের দিন শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কোচে চড়ে তারা কাঞ্চন মালাকে সঙ্গে নিয়ে দিনভর মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর পরিদর্শন করেন।
সূত্র জানায়, মুজিবনগর পরিদর্শনকালে নাস্তাসহ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন কাঞ্চন মালা। মুজিবনগর ও মেহেরপুর পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় তদন্ত টিমের সদস্যরা কুষ্টিয়ায় ফিরে রাত্রিযাপন করেন। তদন্ত শেষে শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে তারা একযোগে কুষ্টিয়া ত্যাগ করেন।
এদিকে, দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত করতে এসে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে আপ্যায়ন গ্রহণ করা এবং তাকে নিয়ে বিভিন্নস্থান পরিদর্শনের ঘটনায় তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জ কাঞ্চন মালা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন।
তদন্ত টিমকে আপ্যায়ন এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত টিমকে সহযোগিতা করেছি। এর বেশি কিছু নয়।
জানতে চাওয়া হলে তদন্ত টিমের আহ্বায়ক সুলতানা পারভীন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, আশা করছি, তিনজন মিলে আলোচনা করে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে।
তদন্ত টিমের অপর সদস্য খোরশেদ আলম অভিযুক্ত ইনচার্জ কাঞ্চন মালাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের কথা স্বীকার করে বলেন, যেহেতু তদন্তে তিনি এখনো দোষী প্রমাণিত হননি সেজন্য তাকে নিয়ে বেড়ানোতে দোষের কিছু আছে বলে মনে করি না।
কেএস