Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের নানা পদক্ষেপে মহাসড়কে কমছে সড়ক দুর্ঘটনা

জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা

জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা

জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৫:৩৪ পিএম


কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের নানা পদক্ষেপে মহাসড়কে কমছে সড়ক দুর্ঘটনা
  • মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা যা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম  
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ চালক-হেলপারদের মাঝে সচেনতামুলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ
  • ২০২২ সালে চার হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ১৭ হাজার যানবাহনকে সতর্ক করা হয়েছে
  • ১৪ হাজার ৪৩০টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ যানবাহন আটক 
  • গত বছর ১৫ হাজার চালককে ট্রাফিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে

দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কুমিল্লা থেকে তদারকী করা হয় হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চল। এর অধীনে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের (পার্বত্য এলাকা ছাড়া) ৭৮০ কি:মি: মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক। এর মধ্যে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এসব সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশের সমীক্ষায় দুর্ঘটনার জন্য ১০টিরও বেশী কারণ চিহিৃত করা হলেও এর প্রতিকারে নেই সরকারি উদ্যোগ। বিপদজনক ইউটার্ন, মোটরসাইকেলসহ কম গতির ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন না থাকা, ৫শতাধিক ফিডার রোড, মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে হাইওয়ে পুলিশ দাবি করেছে। গত বছর (২০২২) এ অঞ্চলে ৩২৭ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৪৭ জন। এর আগে ২০২১ সালে ৪৪১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৪৪৪ জন। যা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।  

হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, কুমিল্লা-সিলেট সড়কের হবিগঞ্জ পর্যন্ত, কুমিল্লা-চাঁদপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কসহ ৭৮০ কি: মি: সড়ক রয়েছে। এসব সড়কে ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ৫৪টি বিপদজনক ইউটার্ন, ফিডার রোড (মহাসড়কের সাথে যুক্ত হওয়া গ্রামীন সড়ক) রয়েছে ৫২৭ কি: মি:। সিএনজি স্টেশন রয়েছে ১০৪টি, মহাসড়ক সংলন্ন বৈধ ইজারা দেয়া হাট-বাজার ২২টি, গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা ৭০টি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯২টি, হাসপাতাল-ক্লিনিক ১৯টি, বাস স্টেশন ৭১টি এবং ৩৪টি ফুটওভারব্রিজ। 

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ব্যস্ততম মহাসড়ক-সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলসহ ছোট যাবাহনে কম দূরত্বে যাতায়াতে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, রোগী পরিবহন, পথচারী চলাচল এবং সিএনজিতে গ্যাস নিতে মহাসড়কে এসে দুর্ঘটনায় পড়ছে। ফুটওভারব্রিজ থাকলেও ব্যবহারের প্রবণতা কম। আবার ভিন্ন চিত্রও আছে। ব্যস্ততম অনেক এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারেও ঘটছে দুর্ঘটনা। ৩০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে অদক্ষ চালক, ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচল ও রাস্তায় যত্রতত্র যাত্রী উঠানো ও নামানো জন্য।  

দুর্ঘটনার পরিসখ্যান অনুসারে ২০২১ সালে ৪৪১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৪৪ জন এবং ২০২২ সালে ৩২৭ দুর্ঘটনা নিহত ৩৪৭ যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। গত বছরে নিহতদের মধ্যে ১৩০ জন ছিল পথচারী। ২০২২ সালে কুমিল্লা জেলায় ১৪২ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৫১ জন। আগের বছর (২০২১) ১৮১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১৮৬ জন। ২০২১ সালে এ জেলায় ১৭ সিএনজি অটো রিক্সা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৬ জন এবং ২০২২ সালে ১১ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হয়। গত বছর ৭০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৭৮ জন। মহাসড়ক গুলিতে যত্রতত্র ইউটার্ন ও ফিডার রোডের মাথায়ও ঘটছে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশ কিছু ইউটার্নে রিপ্লেক্টিভ স্টিকার নেই। এতে রাতের বেলায় এসব স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব ইউটার্নে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা লাল নিশান টাঙিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে এদিকে মহাসড়কে দুর্ঘটনা হ্রাস করতে হাইওয়ে পুলিশ স্পিডগানে অধিক গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালে চার হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ১৭ হাজার যানবাহনকে সতর্ক করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ চালক-হেলপারদের মাঝে সচেনতামুলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ। ১৪ হাজার ৪৩০টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ যানবাহন আটক করা হয়েছে। গত বছর ১৫ হাজার চালককে ট্রাফিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাইওয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবিকা নির্বাহ থেকে নিত্য প্রয়োজনে হাইওয়ের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের কম দূরত্বের চলাচলে একমাত্র ভরসা সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মোটরসাইকেলসহ কিছু ছোট যানবাহন। আলাদা লেন না থাকায় দ্রুত গতির যাবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে এ গুলি চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। তাই সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আলাদা লেন তৈরীর বিষয়টি জরুরী।

কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সড়ক-মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ কিংবা এদের জন্য আলাদা লেন করার দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। জাতীয়ভাবে এসব সমস্যা গুলি সরকারের নজরে আনা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীত চাকমা বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ইউটার্নগুলোতে রিপ্লেক্টিভ স্টিকার ভেঙে যাওয়ায় লোকজন সেগুলো নিয়ে গেছে। বর্তমানে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে মেরামতের কাজ চলছে। শেষ হলে শিগগিরই রোড সাইন স্থাপন করা হবে।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োমিত অভিযান, সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও চালকদের প্রশিক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সড়কে দ্রুত গতির বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকারের সাথে একই লেনে চলে মোটরসাইকেলসহ কম গতির যানবাহন। কারণ এ অঞ্চলের কম দূরত্বের যাতায়াতে জরুরী প্রয়োজনে শিক্ষার্থী, রোগী, শ্রমিকসহ সাধারণ লোকজনের জন্য মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহনই একমাত্র ভরসা। তাই ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরী করা হলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।  

কেএস 

Link copied!