Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ভেজালমুক্ত কৃষি পণ্যের ‌‌‘নিরাপদ খাদ্য কর্ণার’ এখন মুদি দোকান

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম


ভেজালমুক্ত কৃষি পণ্যের ‌‌‘নিরাপদ খাদ্য কর্ণার’ এখন মুদি দোকান

বর্তমান সরকারের অভিষ্ট লক্ষ্য জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করা। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা ও তার ন্যয্যমূল্য নিশ্চিত ও নিরাপদ শাক-সবজি, ফলমূলের নির্দিষ্ট প্রাপ্তির জন্য “নিরাপদ খাদ্য কর্ণার” করার জন্য রাজবাড়ী জেলাতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে স্থানীয় বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এসডিজি সমন্বয় সভায় রাজবাড়ী জেলা কমিটিও একটি “নিরাপদ খাদ্য কর্ণার” স্থাপন করার জোর প্রচেষ্টা চালায়। এ কমিটির মহতী উদ্যোগের সুযোগ নিয়ে রাজবাড়ীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর সড়ক বিভাগ ও পৌরসভার জায়গাতে রাজবাড়ী বড়পুল মোড়ে তার দপ্তরের প্রধান গেটের পাশে একটি “নিরাপদ খাদ্য কর্ণার” নামে দোকান স্থাপনা করেন।

কিন্তু পরবর্তীতে স্থাপনার একটি কর্ণারকে বেড়া দিয়ে দুটি কর্ণার করে নিজ দপ্তরের দু’জন কর্মচারীর মাঝে নিরাপদ খাদ্য কর্ণারের নামে ২ টি দোকান প্রদান করেন।

সরেজমিন নিরাপদ খাদ্য কর্ণারে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, একটি অংশে মুদি দোকানের বিভিন্ন মালামাল বিক্রয় করছেন। যা নিরাপদ খাদ্য কর্ণারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য’র সাথে কোন মিল নেই। স্থানীয় কোন কৃষকের নিকট থেকে নিরাপদ ফসল আসবে তার সুনির্দিষ্ট কোন তালিকা, পরিকল্পনা ও প্রত্যয়ন নেই। নিরাপদ খাদ্য কর্ণারে কোন স্থানীয় খামারী, কৃষকের কোন উৎপাদিত পণ্য নেই। দোকান দু’টিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চিপস, বিস্কুট, চানাচুরসহ মুদিখানার পণ্য সামগ্রী। নেই নিরাপদ খাদ্য কর্ণারের কোন সাইন বোর্ড।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্ণার গড়ে তোলা হয়েছে, তা আমরা অবগত নয়। আমাদের কাছ থেকে কোন পণ্য ক্রয় করা হয়নি। কৃষকের উন্নয়নের জন্য নয় তাদের পকেট উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিয়ে এসডিজির অগ্রগতিকে বাঁধাগ্রস্ত করেছেন। এসব কারণে সরকারের উন্নতিমূলক কর্মকান্ড ও ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছেন।

তারা বলেন, স্থানীয় কোন কৃষকের বা উদ্যোক্তার বাড়িতে ক্ষুদ্র আকারে কৃষি পণ্য প্রসেসিং করলে নিরাপদ খাদ্য কর্ণারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মচারী অফিস গার্ড অরিন আহমেদ ও স্প্রেয়ার মেকানিক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্ণারের দায়িত্ব অফিস তাদের দিয়েছেন। কিন্তু তারা অফিসের কাজ করে বিধায় তাদের একজনের ছেলে ও অন্যজনের ভাই নিরাপদ খাদ্য কর্ণারে বসে মালামাল বিক্রি করে।

তারা বলেন, এখনও নিরাপদ খাদ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে প্রসেসিং চলছে। তবে আমরা চিপস, পালন শাক, আলু, চাল বিক্রি করছি। নিরাপদ খাদ্য কর্ণারের সাইনবোর্ডও লাগাইনি। প্রচারণা চালাচ্ছি, লোকজন আসলে বলবো যে এখানে নিরাপদ খাদ্য পাবেন।

এ ব্যাপারে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, অরিন আহমেদ ও তার ৫ লাখ ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্ণারের ঘর তৈরি করতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য বদলীকৃত উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর আমাদের সহানুভূতি দেখিয়ে মৌখিকভাবে ঘর তোলার অনুমতি দিয়েছেন। স্যারের নির্দেশে আরসিসি করে ঘর তুলেছি।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নুর আকবরকে উৎকোচ প্রদান করে এ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, এ বিষয়টি সত্য কিনা জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য বদলীকৃত উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর বলেন, ডিসি অফিসের ১ জন ও তার অফিসের ২ জন আছেন। তার অফিস থেকে তাদের দুইজনকে নিযুক্ত করা হয়েছে।

কোন কোন ইউনিয়ন থেকে নিরাপদ খাদ্য সংগ্রহ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি অনেক কঠিন কাজ। ডিসি অফিস, সমাজসেবা অফিস ও আমরা সবাই মিলে এটা করা হচ্ছে। মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং কিছু খাদ্য অনলাইনে ভালো পাওয়া যায়, সেখান থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্ণারে চিপস, চানাচুর বিক্রি করা হচ্ছে কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শুনলাম এগুলো বিক্রি করছে। ফুড কর্ণারতো তাই এগুলো বিক্রি করতে পারবে। তবে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় কিনা সেটা দেখতে হবে।

কোন কোন কৃষকের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী নিয়েছেন প্রশ্ন করলে বলেন, ওখানে চিঠি দেওয়া আছে কিন্তু আমার মনে নেই।

অফিসের গার্ড অরিন আহমেদ ও স্প্রেয়ার মেকানিক তোফাজ্জল হোসেনকে নিরাপদ খাদ্য কর্ণার পরিচালনার জন্য অফিসিয়ালি দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন সেক্ষেত্রে একটা চিঠি বা নোটিশ অবশ্যই তাদেরকে দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, দেওয়া হতে পারে কিন্তু মনে নেই।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শরীফ খান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। ওখানে লোক পাঠিয়ে দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গা কিনা। তবে যতদুর জানি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জায়গার সীমানায় কৃষি অফিসের গেইট।

টিএইচ

Link copied!