জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা প্রতিনিধি
জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৯:২১ পিএম
জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা প্রতিনিধি
জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৯:২১ পিএম
আধুনিক বিশ্ব মানেই প্রযুক্তির বিশ্ব। প্রযুক্তি মানব ইতিহাসের অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন প্রভাবশালী এবং প্রতিদিন এই প্রভাব বেড়েই চলেছে। শিক্ষা ও শিখন ব্যবস্থাপনায় নানা ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে দেশ বিদেশের শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশের স্কুলগুলোকেও প্রযুক্তির এই জোয়ার স্পর্শ করেছে। দেশের বড় বড় স্কুলগুলোতে নানা ধরণের স্কুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকলেও লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অভাব আছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের একটি দল এরকমই একটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডেভেলাপ করেছে যার নাম ‘শিক্ষায়তন’। কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্বাবধানে এক বছর ধরে সফল পাইলটিং শেষে শিক্ষায়তন এর মাধ্যমে পাঠদান শুরু হতে যাচ্ছে কুমিল্লা জেলার ৫টি স্কুলে।
স্কুল ৫টি হলো: কুমিল্লার কালেক্টরেট স্কুল, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাধীন শিদলাই আশরাফ স্কুল, ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ওশান হাই স্কুল এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। সফটওয়ারটির ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন করেছেন ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও সোহেল রানা ও ডেভেলাপ করেছে বিজনেস এক্সিলারেট বিডি লি. নামে এক প্রতিষ্ঠান।
যেখানে দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্যই এরকম সমন্বিত প্যাটফর্ম গড়ে উঠেনি সেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এরকম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম স্বপ্নের মতো।
শিক্ষায়তনের ডেভেলাপার বিজনেস এক্সিলারেট বিডি লি. এর সিইও কামরুল হাসান সুমনের এ ধরণের সফটওয়্যার আর বাজারে নেই। “বাজারে প্রচলিত সফটওয়ারে ক্লাসরুমে কি পড়ানো হচ্ছে সে বিষয়টি সংযোগ করার অপশন কম। শিক্ষায়তনের মাধ্যমে অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা জানতে পারবেন তার বাচ্চারা কি পড়ছে।
বর্তমান বাজারে শিক্ষায়তনের অনুরূপ কোন সফটওয়্যার নেই। যেগুলো আছে যেমন টেন মিনিট স্কুল কনটেন্ট বেজড। আমাদের এই সফটওয়্যার কনটেন্ট নির্ভর নেই। জেলা প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে এরকম সফটওয়্যার এর ডিজাইন অভাবনীয়। আমরা এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং ভবিষ্যতে এটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক।”
সফটওয়ারটি সরকারের কোন বিশেষায়িত সংস্থা অথবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে জেলা প্রশাসনের মতো ব্যস্ত সরকারি অফিসে উদ্ভাবিত হলো এই ব্যাপারটিই বিস্ময়কর। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন প্রান্তিক পর্যায়ের স্কুলে সফটওয়ারটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সফটওয়ারের মাধ্যমে স্কুলের প্রায় সকল কার্যক্রম অনলাইনের করা যাবে। সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিবন্ধিত থাকবে। শিক্ষায়তনের বিশেষত্ব হচ্ছে বাংলা ভাষায় সকল কার্যক্রম, কোর্সকেন্দ্রিক কার্যক্রম, বিশেষ ফিচার যেমনঃ প্রত্যহের পড়া, গ্রেডিং রুব্রিক্স, আকর্ষনীয় ইউআই/ইউএক্স, উচ্চ কাস্টমাজিবিলিটি।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্কুলগুলো শিক্ষায়তন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে পারছে। তবে, পরবর্তীতে শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লে এই সফটওয়ার ব্যবহারে গুনতে হতে পারে পয়সা। তবে, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষার প্রদানের ফলে শিখন ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের ছোঁয়া আসবে।
এ বিষয়ে সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, আমি জেলা প্রশাসনে যোগ দেওয়ার থেকেই পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছিলাম।
আমাদের টিমের একজন ইউএনও ব্রাহ্মণপাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অভাবের কথা বললে আমরা সেই অভাব পূরণে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরী করার উদ্যোগ নেই এবং পরবর্তীতে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেই। সেখান থেকেই মূলত শিক্ষায়তনের যাত্রা শুরু।”
তবে সফটওয়ারের বাস্তবায়নে বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলে জানান ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও সোহেল রানা। তিনি বলেন, আমরা সফটওয়ারের সফল ডেভেলাপমেন্ট শেষ করেছি এবং আরো উন্নয়ন করছি। তবে, মূল চ্যালেঞ্জ হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটি বাস্তবায়ন। যেমন এই অ্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে কম্পিউটার বা ন্যুনতম একটি স্মার্টফোনের প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের অনেকের কাছেই সেটি নয়।
এরপর যদিও সফটওয়্যার ব্যবহার খুব সহজ তথাপি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথা ভাঙার ক্ষেত্রে একটা জড়তাও আছে। সেটি কাটিয়ে উঠতে হবে।
এছাড়া, এই পদ্ধতিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, তাদের লেকচার প্রস্তুত করতে হবে, সেগুলো সিস্টেমে আপলোড করতে হবে। শিক্ষকরা এতে অনীহা দেখাতে পারেন। কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা গেলে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা সম্ভব।”
টিএইচ