Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

মাটিখেকোরা বেপরোয়া

সালথায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন, নীরব প্রশাসন

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ০৪:০৬ পিএম


সালথায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন, নীরব প্রশাসন

ফরিদপুরের সালথায় সোনালি আঁশ পাট, পেঁয়াজ ও আমন ধানের জমির মাটিকেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আর এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটা ও রেললাইনে।

আবার অনেকে বাড়ির ভিটা তৈরি করার জন্য মাটি কিনে নিচ্ছেন। এতে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি।

প্রশাসনের নিরবতার কারণে ভূমি আইন অমান্য করে অবাধে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেই চলছে অসাধু মাটিখেকো ব্যবসায়ীরা। যেন দেখার কেউ নেই।

অভিযোগ রয়েছে, একটি প্রতারক চক্র প্রশাসনের নাম ভেঙে ফসলি জমি ধ্বংস করে মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাটি খেকোদের উৎপীড়নে দিশেহারা জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা। তবে মাটি খেকোদের পরামর্শে কোনো কোনো জমির মালিক জমিতে ফসল ফলানোর চেয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে বেশি লাভের আশায় পুকুর খনন করছেন।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজিমনে দেখা যায়, উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের খলিশপট্টি গ্রামে মদন হাজী বাড়ির সামনে মাঠের ভিতর ফসলি জমির উর্বর মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে অবৈধ ট্রলি গাড়ি ও ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে ইটভাটায়।

প্রায় দেড় বিঘা আবাদি জমি থেকে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে; আর ৪ থেকে ৫টি অবৈধ ট্রলি গাড়িতে করে তোলা মাটি নেওয়া হচ্ছে। ওই জমির চারপাশে হালি পেঁয়াজের চারাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। মাটিখেকোদের কৃষি জমি ধ্বংসের লিলা দেখে যেন পেঁয়াজের চারাগুলো কাঁদছে।

ভেকু ও ট্রলির ড্রাইভাররা জানান, জমির মালিক খলিশপট্টি গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে শাখাওয়াত হক। তিনি এসব মাটি ইটভাটায় ও গৃহস্থদের কাছে বিক্রি করছেন। আমরা শুধু মাটি কেটে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটি তোলার কাজে নিয়জিত একজন বলেন, মাটি কাটা শুরুর প্রথম দিন মোটরসাইকেলযোগে ২ থেকে ৩ জন লোক এসে জমির মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। এই টাকা দিয়ে তারা নাকি ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করবে বলে জানায়। এরপর থেকে গত চার দিন ধরে আমরা নিরাপদে মাটি কাটছি। কেউ আমাদের বাধা দিচ্ছে না।

এ বিষয় জমির মালিক শাখাওয়াত হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে শাখাওয়াতের ভাই হাসমত হক বলেন, ‘শাওখাওয়াত হক অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে টাকার জোগাড় করছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিরাপদে মাটি কাটার জন্য কাউকে কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি কাটায় আমাদের কেউ বাধা দেয়নি।’

অপরদিকে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের পিসনাইল বোড অফিসের পাশে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করতে দেয়া দেখা নাসির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে। একই ইউনিয়নের কাজীর বল্লভদী মাঠে ফসলি জমির উর্বর মাটিকেটে বিক্রি করছেন ইদু শেখ নামে আরেক ব্যক্তি।

ইদু শেখ ও নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের জমির মাটি আমরা বিক্রি করতেই পারি। পুকুর খনন করে মাছ ছাড়বো। ফসলের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। তাই পুকুর বানাচ্ছি। আমরা এসব মাটি রেললাইন নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছি। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছি অনেকদিন ধরে কেউ তো আমাদের বাধা দিচ্ছে না।’

এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় তিন ফসলি জমির মাটিকেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর দাবি, মাছ চাষের কথা বলে পুকুর খনন করে বিঘার পর বিঘা আবাদি কৃষিজমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতারা।

এসব মাটি অবৈধ ট্রলিতে করে নেওয়া-আনার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাচাপাঁকা সড়কের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সালথার সোনাপুর-মাঝারদিয়া সড়কের অটোচালক ফারুক হোসেন ও ভ্যানচালক রায়হান বলেন, ‘সড়ক যতই মেরামত করুন, তাতে লাভ নেই। অবৈধ ট্রলি দিয়ে মাটি নেওয়া-আনা বন্ধ করা না হলে সড়কের বেহাল অবস্থা ভালো হবে না।’

 তবে মাটিখেকো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, ‘যেখানেই ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি করা হবে, সেখানেই অভিযান চালানো হবে। খোঁজ-খবর নিয়ে সব জায়গায় মাটিকাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সালাউদ্দীন আইয়ুবী বলেন, ‘কোনোভাবেই ফসলি জমি থেকে মাটিকেটে পুকুর খনন করা যাবে না। আমরা এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। আর ভূমি অফিসের কেউ যদি সুবিধা নিয়ে মাটিকাটার সুযোগ করে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এআরএস

Link copied!