মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা
জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০২:৪৬ পিএম
মাসুম বিল্লাহ, গাইবান্ধা
জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০২:৪৬ পিএম
সূর্যমুখীর হাসিতে স্বপ্ন বুনছেন গাইবান্ধার ফুল চাষী কৃষকেরা। তাইতো পরম দরদ দিয়েই পরিচর্যা করছেন সূর্যমুখীর বাগান। অনুকুল আবহাওয়া আর কৃষকের পরম আদরে বেড়ে উঠা সূর্যমুখী ফুল সুভাস ছড়াচ্ছে জেলার সাত উপজেলার ৫৬০ বিঘা এলাকাজুরে। এরমধ্যে কেবল জেলার সাঘাটা উপজেলার যমুনার চরের ১১২ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে এই সূর্যমুখী।
প্রণোদনার বীজ-সার আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিন ফসলি হিসেবে চাষ করা এই আবাদে লাভবান হওয়ার আশা এই উপজেলার উত্তর সাতালিয়া, গোবিন্দি, হাসিয়ালকান্দি ও চর হলদিয়ার কৃষকদের। গাইবান্ধার আবহাওয়া ও চরের মাটি সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় চরাঞ্চলে দিন দিন এই ফুল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
বর্তমানে ফুটন্ত সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে নতুন রুপে সেজেছে সাঘাটায় যমুনার চর। ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের চাহুনি অবতারণা করছে নয়নাভিরাম দৃশ্যের। সূর্যমুখীর এমন মনোহর পরিবেশ আকৃষ্ট করবে প্রত্যেক পথিককেই। আর এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মৌমাছির উড়ে পড়ার দৃশ্য। মাঘে উত্তরের হিমেল হাওয়ার সাথে দোল খাওয়া ফুটন্ত সূর্যমুখীর নাচ দেখে তৃপ্তির হাসি ফুটছে চাষীদের মুখেও।
তবে, সূর্যমুখী ফুলচাষের উদ্দেশ্য কেবল বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে বাণিজ্যিক ভাবেই চাষ করা হচ্ছে এই ফুল সূর্যমুখী।
কৃষিবিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদ হওয়া তেল মানসম্পন্ন এবং স্বাস্থ্যসম্মত। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সূর্যমুখী তেলের। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই তেল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্যও তুলনামুলক অনেক উপকারী।
তারা জানান, অক্টোবর থেকে নভেম্বর সূর্যমুখীর বীজ বপনের উৎকৃষ্ট সময়। বীজ বপনের ১২০ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যেই এই ফসল উৎপাদন হয়। বিঘাপ্রতি ছয় থেকে থেকে আট মণ বীজ উৎপাদন হয় সূর্যমুখীর। আর প্রতি মণ বীজে তেল উৎপাদন হয় কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লিটার। সূর্যমুখী চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকা।
উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের হাটবাড়ি চরের (যমুনা বাজার) মো. শাহ আলম মিয়া (৪৫) বলেন, পাশের এক ব্যক্তির এই ফুল চাষ করা দেখে এবার আমিও গম, ভুট্টা ও পেঁয়াজের পাশাপশি এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। গাছে প্রচুর ফুল এসেছে, গাছ বড়ও হয়েছে। আশা করি ভাল ফলন পাব, লাভ হবে। কেননা, সূর্যমুখীর কোনো কিছু ফেলতে হয়না। বীজ থেকে তেল আর খৈল হয়। আর ফুলের গাছ থেকে হয় জ্বালানি। অন্যান্য আবাদের তুলনায় খরচ অনেক কম, বিঘাতে মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হয়।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.সাদেকুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, উপজেলার যমুনার চরের উত্তর সাতালিয়া, গোবিন্দি, হাসিলকান্দি ও চর হলদিয়ায় এবার ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে হাইসান-৩৩ ও আরডি-৭৫ নামের উচ্চ ফলনশীল জাতের সূর্যমুখী। আমরা আশা করছি কৃষকদের কাঙ্খিত ফসল উৎপাদন হবে এবং তারা লাভবান হবেন। কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ ও লাভবান করতে সরকারিভাবে বীজ ও সার প্রণোদনাসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত এসব বীজ ও তেল প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। আগামীতে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে বলেও প্রত্যাশা এই কর্মকর্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধার উপ-পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, গাইবান্ধায় সূর্যসুখীর চাষ এখনো ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি। গত বছর কৃষি অফিসের প্রচারণায় জেলার বেশ কিছু এলাকায় এর চাষ শুরু হয়েছে। এবারে তা বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী।
তবে আমরা কৃষককে তিন ফসলি হিসেবে এটির চাষাবাদ করতে উদ্বুদ্ধ করছি। সাত উপজেলার ৫০০ কৃষককে সূর্যমুখীর বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সূর্যমূখী চাষাবাদে অনেক খরচ কম, কৃষকরা এটি চাষ করলে লাভবান হবে।
কেএস