Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

চসিক প্রকল্প কর্মকর্তাকে মারধরের মামলা ডিবিতে স্থানান্তর

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম ব্যুরো

জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০৭:৩৪ পিএম


চসিক প্রকল্প কর্মকর্তাকে মারধরের মামলা ডিবিতে স্থানান্তর

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রকল্প কর্মকর্তা মো. গোলাম ইয়াজদীনের মামলা পুলিশ থেকে মহানগর ডিবি (উত্তর বিভাগে) স্থানান্তর করা হয়েছে।

দায়েরকৃত মামলায়ের ঠিকাদার আটক এবং মামলা পুলিশ থেকে ডিবিতে স্থানান্তরসহ বিভিন্ন আলোচনা ছাপিয়ে  প্রকল্প কর্মকর্তা চট্টগ্রাম ছেড়ে কখন চলে যাচ্ছেন এটাই আলোচনার মুখ্য বিষয়।

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র মাধ্যম জানিয়েছেন, এই প্রকল্প কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। মূলত তাকে চট্টগ্রাম থেকে সরাতে কোন উপায়ান্তর না পেয়ে হামলার ঘটনা করেন। যাতে তিনি লজ্জা শরমে চলে যান।  ২৫০০ কোটি টাকার  প্রকল্প ইচ্ছে মতো লুটপাট করতে পারেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেল পৌনে ৪ টায় নগরের টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)  অস্থায়ী কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম ইয়াজদানীকে ১৫-২০ জন ঠিকাদার ইচ্ছে মত লাঞ্ছিত ও হামলা করেন। তাকে হামলার সময়, সৎ ভালো লোক বলে কটাক্ষ করেন। সৎ ভালো লোকের স্থান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে হবে না। এ সময় প্রকল্প পরিচালক বলেন নিয়মের বাইরে কোন টেন্ডার দেওয়া হবে না। এটা বলার পরপরই তার ওপর হামলা শুরু করেন। ঠিকাদার  কংকন, ফেরদৌস, সুভাষ ও আলমগীর গোলাম ইয়াজদানীর শার্টের কলার ধরে টেনে ঘুষি মারেন। তারা সবাই মিলে তার শার্ট টেনে ছিঁড়ে ফেলে ও প্যান্টের বেল্ট খুলে ফেলেন।

একপর্যায়ে অফিসের অন্য স্টাফরা আসলে হামলাকারীরা বের হয়ে চলে যায়।তবে এই হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের আটকানোর চেষ্টা করেনি। চসিকের ইতিহাসে এরকম ঘটনা আর ঘটেনি। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আটককৃতদের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এছাড়া হামলায় বিএনপি সমর্থক এক ঠিকাদারও জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

জানা যায়, হামলায় নেতৃত্ব দেয়া শাহ আমানত ট্রেডার্সের সঞ্জয় ভৌমিক কংকন  এক সময় এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে নগর ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত। কংকন নগর যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

সূত্রমতে, চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের সাথে পার্টনারে সিটি করপোরেশনের  বেশ কিছু ঠিকাদারি কাজ করেছেন কঙ্কন। বর্তমানে তিনি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর অনুসারী বলে নিজেকে পরিচয় দেয়। রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে বিভিন্ন সময় ছবি  তুলে তাকে ফেসবুকে প্রচার  করতে দেখা যায়।

শাহ আমানত ট্রেডার্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সুভাষ। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী তিনিও প্রকল্প পরিচালকের উপর হামলার সাথে জড়িত। সুভাষ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।  প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছাকাছি থাকার কারণে ঠিকাদারিতে জড়িয়ে পড়েন। জ্যোতি এন্টারপ্রাইজের আশীষ বাবু যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে। চসিকের বিভিন্ন প্রকল্প কাজ করার কারণে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সাথে তার ঘনিষ্ঠ রয়েছে -এমন তথ্য দিয়েছে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের একাধিক সূত্র।

এদিকে হামলার ঘটনায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার ঠিকাদার সাহাবুদ্দিনের  নাম উল্লেখ করেন। তাদের দাবি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তারা সাহাবুদ্দিনকে সাবেক বিএনপি ক্যাডার বলেও উল্লেখ করেন।

তবে আমার সংবাদে হাতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়,  ঠিকাদার সঞ্জয় কুমার  ভৌমিক ও সুভাষ মজুমদারের নেতৃত্বে এই হামলা চালায় ১৫-২০ জন ঠিকাদার।সিসিটিভি ফুটেজে কোথাও সাহাবুদ্দিনের  উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া নন্দনকানন ২ নং গলির তছলিম নামে যুবক ঘটনার সাথে জড়িতের অভিযোগ থাকার পরও দায়ের করা মামলায় তার নাম দেখা যায়নি। এতে অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার সঞ্জয় ভৌমিক কংকন গণমাধ্যমকে জানান, তিনি করপোরেশনে গিয়েছিলেন। প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গেও দেখা করেছেন। কাজ না পেলে দরপত্র জমা দেওয়ার সময় যে পে-অর্ডার দিয়েছিলেন, তা ফেরত দিচ্ছেন না। কেন ফেরত দিচ্ছেন না, তা জানতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো হামলা বা মারধরের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

এদিকে হামলার ঘটনায় প্রধান  রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে প্রধান করে  একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই বিষয়ে চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, রোববার প্রকল্প পরিচালকের  কক্ষে হামলার ঘটনায় আমাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।এতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ, আইন কর্মকর্তা মনীষা মহাজনকে সদস্য করা হয়েছে।আমাদেরকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কেএস 

Link copied!