বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৪:৫৮ পিএম
বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৪:৫৮ পিএম
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার না করে এবং আদালত আসামির মালামাল ক্রোকের নির্দেশনা দিলেও মালামাল ক্রোক না করে থানার এএসআই ইদ্রজিত কুমার এদবরের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় শাহিন হাওলাদার নামের ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের নিকট উক্ত মামলায় হয়রানির হাত থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ভু্ক্তভোগী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ভরপাশা গ্রামের শাহিন হাওলাদার জানান, তিনি বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পৌর মার্কেটের একজন মাছ ব্যবসায়ী। ২০১৩ সালে তিনি একটি এনজিওর কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে সময়মতো ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। তাসত্ত্বেও তৎকালীন সময়ে এনজিওর ম্যানেজার তার অগোচরে তারই স্বাক্ষর জাল করে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্নসাত করেন। এ ঘটনায় এনজিও মালিক বাদি হয়ে গত বছর তার নামে বরিশালের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং সিআর-৫৭০/২২।
সূত্র জানায়, আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে শাহিন হাওলাদারকে ফেরারী ঘোষণা এবং তার বাসার মালামাল ক্রোকের জন্য বাকেরগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেয়। থানা থেকে সেই নির্দেশনা জারী করতে এএসআই ইদ্রজিতকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
বাকেরগঞ্জ থানার এএসআই ইদ্রজিত কুমার এদবর বৃহস্পতিবার (২ ফ্রেব্রুয়ারি) সকালে বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শাহিন হাওলাদারকে জানান এনজিও থেকে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় আাদালতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা এবং তার বাড়ির মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। এএসআই ইদ্রজিত ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে থানায় গিয়ে দেখা করতে বলেন।
ভুক্তভোগী শাহিন হাওলাদার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় থানায় গেলে তাকে গ্রেপ্তার না করে ওইদিন রাত ১০ টায় দুইজন স্বাক্ষীসহ বাসায় থাকতে বলেন। এএসআই ইদ্রজিত রাত ১০ টায় তার বাসায় গিয়ে সাদা কাগজে দুইজন স্বাক্ষীর (বেল্লাল খান ও নাছির খান) স্বাক্ষর নেয় এবং বলে আপনার বাসায় কোন লোক নেই এবং বাসা তালাবদ্ধ রয়েছে লিখে দিলাম। যাতে আপনার বাসার মালামাল ক্রোক করতে না হয়।
এএসআই ইদ্রজিত তাকে এ মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে তার কাছ থেকে কিছু অর্থও হাতিয়ে নেয়। এমনকি সে একটি কাগজে বরিশালের একজন উকিলের নাম লিখে তার সাথে দেখা করে জামিন নিতে বলেন।
থানায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আদালত থেকে পাঠানো কাগজে শাহিন হাওলাদারকে ফেরারী ঘোষণা করে তার বাসার মালামাল ক্রোক করার নির্দেশনা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও এএসআই ইন্দ্রজিৎ তাকে গ্রেপ্তার কিংবা তার বাসার মালামাল ক্রোক করে না করে আসামির কাছ থেকে অর্থ-বাণিজ্য করেছেন।
মামলায় অভিযুক্ত আসামি শাহিন হাওলাদারের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, দারোগা ইদ্রজিত স্যার খুব ভালো মানুষ। তিনি মাঝে মাঝে তার কাছ থেকে মাছ নেয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকাসত্ত্বেও তিনি তাকে গ্রেপ্তার করেননি। এমনকি ইন্দ্রজিৎ স্যার তার বাসায় গিয়েও মালামাল ক্রোক করেনি।
বাকেরগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান জানান, আদালত শাহিন হাওলাদারকে ফেরারী উল্লেখ করে তার বাসার মালামাল ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদি দায়িত্বরত অফিসার আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গাফিলতি করেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই ইদ্রজিত কুমার এদবর জানান, শাহিনকে গ্রেপ্তারের কোন নির্দেশনা তিনি পাননি। মামলায় আদালত শাহিন হাওলাদারের বাসার মালামাল ক্রোকের নির্দেশনা দিলেও তিনি কেন তার বাসার মালামাল ক্রোক করলেননা জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন মালামাল ক্রোক করবো কি করবো না সেটা আমার ব্যাপার, তাতে আপনাদের কি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) ফরহাদ সরদারকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আদালত মাল ক্রোকের নির্দেশ দিলে সেক্ষেত্রে মালক্রোক করতে হবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে আসামিকে পেলে গ্রেপ্তার করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলেও সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন।
কেএস