ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩, ০২:০৯ পিএম
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩, ০২:০৯ পিএম
ঠাকুরগাঁওয়ের ছোট শিশু সুজয় পাল। জন্মের পর থেকে আচরণ ঠান্ডা মেজাজের৷ তাই আদর করে দাদি ডাক নাম রেখেছিলেন ঠান্ডি৷ দিন বাড়তে বাড়তে সকলের আদরের পাত্র হয়ে ওঠে সে৷ তবে এক বছর যেতে না যেতেই সে আদরের রং বদলায়। প্রস্রাব ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয় সুজয় পালের৷
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের সুবাস পাল ও রুপালী রাণী দম্পতির ছোট সন্তান সুজয় পাল৷ পেশায় কাঠমিস্ত্রীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সুবাস পাল। ছেলেকে সুস্থ করতে চিকিৎসার অর্থের যোগান দিতে ছুটছেন প্রতিনিয়ত মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটলেও কোনো উপায় না পেয়ে দিশেহারা সুজয় পালের পরিবার।
জন্মের এক বছর পর ডাক্তারের পরামর্শে জানতে পারি সুজয়ের জন্মগত কিডনির সমস্যা রয়েছে। আমাদের যা ছিল সব দিয়ে চিকিৎসা করলাম। তবুও বাচ্চাটা সুস্থ হচ্ছে না। দিন দিন আরো শুকিয়ে যাচ্ছে৷ প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ডাক্তার বিদেশে নিয়ে যেতে বলছে৷ আমাদেরতো সামর্থ্য নাই। কেউ সহযোগিতা না করলে আমার কলিজার টুকরাটাকে সুস্থ করতে পারবো না৷ আপনারা আমার ছেলের পাশে দাঁড়ান। এভাবেই আকুতি করে বলছিলেন সুজয় পালের মা রুপালী রাণী।
অভাবের সংসারে জন্ম তার। বাবা দিনে আনেন, দিনেই শেষ। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিলেও কাজে আসছে না তার৷ বাড়ির গরু বিক্রি করে সুজয়কে নিয়ে যাওয়া হয় বিভাগীয় শহরে চিকিৎসকের কাছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে খানিকটা সুস্থ হয়ে বাসায় নিয়ে আসে সুজয়। কিছুদিন যেতে না যেতে আবার অসুস্থতা দেখা দেয় তার।
ধার-দেনা করে কোনো মতে টাকা সংগ্রহ করে আবার নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে৷ তবুও সুস্থ হয়নি সুজয় পাল। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। দেশে চিকিৎসা করাতেই হিমশিম খাচ্ছে পরিবার, তার ওপর বিদেশ।
এদিকে ক্রমশ প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত ও শরীর শুকানোর সমস্যায় বাড়ছে জটিলতা। অর্থ যোগাড়ে গিয়ে দিশেহারা পরিবার৷ অর্থ যোগাড়ে ছুটছেন সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক নেতাসহ বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে৷ স্বপ্ন দেখছেন বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়ত সুস্থ হয়ে ফিরবে সন্তান সুজয় পাল৷
সুজয় পালের দাদা দ্বিজেন পাল বলেন, আমার নাতিটার মুখটা দেখলেই খুব খারাপ লাগছে৷ কী করবো না করবো কোনো কিছুই বুঝতে পারছি না৷ আমার ছেলের হাতটা ছাড়া কিছু নাই। সব শেষ করে ফেলেছে৷ এখন নাকি বিদেশ নিয়ে যেতে হবে৷ যদি আপনারা সহযোগিতা করেন তাহলে আবার সুস্থ হবে নাতিটা৷
প্রতিবেশী সাবিত্রী পাল বলেন, সুজয়ের বাবা দিন আনে দিন খায়৷ দেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে৷ আমরা প্রতিবেশী হিসেবে যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি৷ এখন সরকার যদি সহযোগিতা করে বা সমাজের যারা সামর্থ্যবান আছেন তারা সহযোগিতা করলে ছেলেটা সুস্থ হবে৷
সুজয়ের বাবা সুবাস পাল বলেন, পাঁচ মাস ধরে চিকিৎসা করাচ্ছি৷ কোনো ধরনের সমাধান পাচ্ছি না। দিন দিন কিডনির জটিলতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। রংপুরে যে ডাক্তারকে দেখাই উনি আমার কোনো ভিজিট নেননি। ওষুধ আর পরীক্ষা করাতেই সব খরচ হয়ে গেছে। ডাক্তাররা বিভিন্নভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন৷ উনারা সবাই মিলে বসেছিলেন আমার ছেলের সমস্যা নিয়ে৷ পরে আমাকে বলেছেন খুব দ্রুত ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে৷ প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। আমি এত টাকা কোথা থেকে পাব? প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি সহায়তার জন্য। তবুও জুটছে না চিকিৎসার টাকা। যদি আপনারা আমার ছেলেটার সুস্থতার জন্য সহযোগিতা করেন তাহলেই আমার ছেলে পৃথিবীতে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে পারবে৷
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্ম্মন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হয়েছে৷ আমরা আরো সহযোগিতা করার জন্য চেষ্টা করছি৷ আপনারাও এগিয়ে আসুন৷
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আসলে বেদনাদায়ক। সুজয়ের চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে৷ সকল বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান করছি৷
আরএস