Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

মাকে আত্মগোপনে যেতে টাকা দিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান

খুলনা প্রতিনিধি

খুলনা প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩, ১২:৩২ পিএম


মাকে আত্মগোপনে যেতে টাকা দিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান

মা হারানো সন্তানের আর্তনাদ, পোশাক দেখে মায়ের মরদেহ শনাক্ত ও পরবর্তী সময়ে জীবিত মা উদ্ধার। খুলনার রহিমা বেগমের অপহরণের নাটকের পর সন্তান মরিয়ম মান্নানের এসব কর্মকাণ্ডে ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিল। ওই মামলার তদন্ত ইতিমধ্যে শেষ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত আমরা শেষ করেছি। পরে পিবিআই সদর দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়া হবে।’

পিবিআই সূত্র জানায়, মরিয়ম মান্নানের মাকে কেউ অপহরণ করেনি। বরং পরিকল্পিতভাবে তিনি আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। আর এই পরিকল্পনার হোতা ছিলেন মরিয়ম মান্নান নিজেই। ঘটনার দিন মাকে আত্মগোপনে যাওয়ার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে টাকাও পাঠিয়েছিলেন মরিয়ম, যা তাদের তদন্তে ওঠে এসেছে।

পিবিআই সূত্র জানায়, রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার ২৫ দিন আগে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় মেয়ে মরিয়ম মান্নানের বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বসেই তারা সাজিয়েছিল এই নাটক। ২৭ আগস্ট বিকেলে মরিয়ম মান্নান ঢাকা থেকে বিকাশের মাধ্যমে খুলনায় মাকে এক হাজার টাকা পাঠান। তার মা সেখান থেকে ৯৮০ টাকা ক্যাশ আউট করেন। রাতে আত্মগোপনে যান তিনি। বিকাশের অফিশিয়াল তথ্য তদন্তের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

২৭ আগস্ট রাত সোয়া ২টার দিকে দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী। পরে মাকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ২৮ আগস্ট দৌলতপুর থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী আক্তার। ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিুকল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম উল্লেখ করা হয়। তাদের সবাইকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। কিছুদিন কারাগারেও ছিলেন তারা।

এদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ নিখোঁজ রহিমা বেগমের দাবি করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রাতে নিজের ফেসবুকে এক পোস্টে মরিয়ম দাবি করেন, মায়ের মরদেহ পেয়েছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানায় গিয়ে লিখিত দেন ওই মরদেহ তার মায়ের। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে মরিয়মের ডিএনএ টেস্ট করেছিল পুলিশ।

পিবিআই বলছে, ফুলপুরে গিয়ে মরিয়ম মান্নান সম্পূর্ণ নাটক করেছিলেন, যা তাদের চক্রান্তের একটি অংশ ছিল। অজ্ঞাত মরদেহকে মা হিসেবে দাবি করার ঘটনায় তারা থানায় যা লিখিত দিয়েছিলেন, তাও তদন্তের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই মামলায় মরিয়ম মান্নান ও তার মা রহিমা বেগমের বিরুদ্ধে দুজন ইতিমধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ ও দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার।

পিবিআই সূত্র বলেছে, ছেলে মিরাজ মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি আদালতে বলেছেন, রহিমা বেগম বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। এটা তার ইগোতে লেগেছে। এ জন্য তিনি স্বেচ্ছায় মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ ছাড়া রহিমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার আদালতে বলেছেন, মরিয়ম মান্নান তাকে বলেছিলেন প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিতে। তিনি মরিয়মের কথায় রাজি না হওয়ায় পুলিশকে ফোর্স করে তাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল। তবে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম কখনো কিছু স্পষ্ট করে বলেননি।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, রহিমা বেগম অত্যন্ত চতুর। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীদের একের পর এক হয়রানি করে এসেছেন। আত্মগোপনের বিষয়টির সব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলেও রহিমা বেগমের মুখ থেকে কোনো তথ্য বের করা যায়নি। এ ছাড়া তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানও মায়ের মতো একই প্রকৃতির।

কেএস 

Link copied!