লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৩:১৫ পিএম
লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৩:১৫ পিএম
বান্দরবানের লামার ১২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৭টিতে নেই শহীদ মিনার।বছর ঘুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারীতে প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু যাঁদের তাজা রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলা ভাষা, তাঁদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে লামা উপজেলায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলেও অবেহেলায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার।
বিদ্যালয় গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের যথাযথ স্মরণ করতে পারেনা। তবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর কোনোটিতে কলাগাছ বা কাঠ দিয়ে অস্থায়ী ভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে পালনই করা হয় না দিনটি।
আবার কোথাও কোথাও শুধু মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে শহীদদের স্মরণ করলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সেটিও করা হয় না। কোনো কোনো শিক্ষার্থী দূর-দূরান্ত কিংবা উপজেলা শহরের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও তা হয়ে ওঠে না অনেকেরই। ফলে ভাষার জন্য লড়াইয়ের পটভূমি ও ঐতিহাসিক ভাষা দিবসের মর্যাদা সম্পর্কে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত পাশাপাশি প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ইচ্ছে থাকলেও তা হয়ে উঠে না
জানা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকে অদ্যাবদি উপজেলার ১২৭টির মধ্যে ১১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখনো শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি। এই কারণে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশ মাতৃকার টানে ভাষা দিবসে শহীদ সকল বীর সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের যথাযথভাবে সুযোগ পাচ্ছে না। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী তুলেছেন স্কুলের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি,মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার থাকলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সহজে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পেত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মাতামুহুরি কলেজে,কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজে,চাম্বি স্কুল এন্ড কলেজে,ডলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে,লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয়,গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, মেরাখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩নং রিপুজিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি করে শহীদ মিনার রয়েছে।
বাকি বিদ্যালয় গুলোতে এখনো নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভাষা দিবসের মত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পালন এর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপজেলা সদরের বা ইউনিয়ন সদরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা,মিলাদ মাহফিল ও প্রভাত ফেরী করেই এই দিবসটি উদযাপন করা হয়।
সরেজমিনে পৌর শহরের নুনারবিল মডেল, রাজবাড়ী, লামামুখ,ছাগল খাইয়া, লাইনঝিরি, কলিঙ্গাবিল পাড়া ও সাবেক বিলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শহীদ মিনার নেই। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় তারা কখনো শহীদ মিনারে ফুল দেয়নি। ফুল দিতে গেলে অনেক দূরে যেতে হয়। তাই তারা যায় না।
লামা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মাহাবুবুর রহমান জানায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার না থাকার ব্যাপারটি জাতির জন্য বড় দুর্ভাগ্য।শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যাপারে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন।
এই বিষয়ে লামা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষার অর্জন-ইতিহাস উপস্থাপন করার জন্য অবশ্যই শহীদ মিনার জরুরি।যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিতে শিক্ষকদের মিটিং মাধ্যমে বলা হয়েছে।
আরএস