লামা প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম
লামা প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম
বান্দরবানের লামায় ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় এক শ্রেণির অধিক মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র বিশেষ করে লোকালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা,পাহাড় কেটে ও ফসলি জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে তুলছে ইট ভাটা। এই সকল ইট ভাটায় নেই কোন সরকারি অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। অবৈধ ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, গ্যাস ও ধুলায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। হারিয়ে যাচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য, বিনষ্ট হচ্ছে আমাদের চির চেনা সবুজ প্রকৃতি পরিবেশ।
লামা উপজেলায় ৪০টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে একটিরও বৈধতা নেই,ইতিমধ্যে সবকয়টি ইট ভাটায় পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ,জ্বালানি হিসাবে পাহাড়ি কাঠও মজুদ করা হয়েছে। ৪০টি ইট ভাটার চুল্লিতে ইতিমধ্যে আগুন দেয়া হয়েছে। অনুমতি ছাড়া ইটভাটা চলমান থাকল ও স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
পাহাড়ে বর্ষার পরপরই সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে অবৈধ ইট ভাটার মালিকরা। উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ৩০টি,ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৬টি,গজালিয়া ইউনিয়নে ২টি,সরই ইউনিয়নে ১টি ও লামা পৌরসভায় ১টি মোট ৪০ টি ইট ভাটার কাঁচামাল হিসেবে মাটির জন্য সাবাড় করা হচ্ছে অসংখ্য উঁচু নিচু সবুজ পাহাড়,ফসলি জমি।
চব্বিশ ঘন্টাই চলছে ইট ভাটার চুল্লী। সেই কালো ধোঁয়া দূষিত করছে পরিবেশ। যা পুরো লামাকে ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে। অপরদিকে, অতিরিক্ত ওজনের ইট ভর্তি ট্রাক গ্রামের সড়কে চলার কারণে টেকসই সড়ক গুলো ভেঙে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার নিমিষেই শেষ হচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা তৈরি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতিসাধন করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শত শত পাহাড় নিমিশে কেটে ইট তৈরি করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,ফাইতং ইউনিয়নে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। জ্বালানি হিসাবে মজুদ করা হয়েছে সবুজ বনের লাকড়ি।ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিলেও এসবের তোয়াক্কা করছেন না ইটভাটার মালিকরা। সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়ে ইটভাটা স্থাপিত হয়।
ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে ৩০টি ইটভাটা। সবগুলো ভাটা স্কুল, জনবসতি গ্রাম,খালের পাড় এবং সড়কের পাশে তৈরি করা হয়েছে।ইতিমধ্যে ফাইতং এলাকায় যন্ত্রের গর্জন ও ধূলা বালিতে সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু ফাইতং ইউনিয়নেই ৩০টি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা নিশ্চিত করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক।
স্থানীয়রা বলছেন,প্রতি বছর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রশাসন সহ সংলিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ বিকফিল্ড গুলো,দিন দিন এলাকায় নতুন নতুন ইট ভাটা সৃষ্টি হচ্ছে এতে প্রতিনিয়ত ধোঁয়ার দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি পরিবেশ হারাচ্ছে বৈচিত্র্য ও বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন।
এলাকার প্রশাসনের এই বিষয়ে অনেকটা নীরব ভূমিকা বছর কয়েক আগে অভিযান চালানো হলেও এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের দৃশ্যমান কোন অভিযান হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন জানান, বসত বাড়ির পাশে ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধুয়ায় আমরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছি।গাছের ফল-ফলাদিও কমে গেছে আবার পাহাড় কেটে যে ভাবে বন উজাড় করা হয় এতে আমাদের সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বন, পাহাড় কেটে ফেলার কারণে আমরা এখন বিশুদ্ধ পানি সংকটে আছি। এখন সহজে পানি পাওয়া যায়না।
উল্লেখ, সম্প্রতি পার্বত্য এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত (১৬ ফেব্রুয়ারি) পাহাড়ের পরিবেশ দূষণকারী ২৭টি অবৈধ ইটভাটা মালিকের রিটের বিষয়ে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট। ফলে ওইসব ইটভাটা উচ্ছেদে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি শেষ হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব,বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
আরএস