Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

কুষ্টিয়া পৌরসভায় টেন্ডার নাটকীয়তায় ঘটনাস্থলে নেই তারা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

মার্চ ১, ২০২৩, ০৩:৪৭ পিএম


কুষ্টিয়া পৌরসভায় টেন্ডার নাটকীয়তায় ঘটনাস্থলে নেই তারা

কুষ্টিয়া পৌরসভার হাট বাজার ইজারার টেন্ডার জমাদানকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে নানা নাটকীয়তা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা এবং বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িতরা হঠাৎ করে এই ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠ গরম করতে চাচ্ছে। এ ঘটনায় নিজেকে ঠিকাদার দাবি করে এক ব্যক্তি কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফিল উদ্দিন, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশি, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস খন্দকার সহ অজ্ঞাত ২০ জনের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করেছেন।

সূত্র বলছে, যিনি মামলার বাদী তিনি অতীতে কখনও কোন হাট বাজার ইজারার সাথে জড়িত ছিলেন না। ঘটনার দিনে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যারা টেন্ডার ছিনিয়ে নিচ্ছে তারা কেউ আসামি হয়নি। অথচ যারা ঘটনাস্থলে ছিলো না তাদের নামে মামলা করা হয়েছে। এই নিয়ে কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গণে সমালোচনার শুরু হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ এবং যুবলীগের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা হওয়ায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না দেওয়া মানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘায়েল করতে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে শুধু মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি চক্রটি। টেন্ডার নাটকীয়তার পর সম্প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়রের কার্যালয়ে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলার আসামিদেরকে আবারও ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী কুষ্টিয়া শহর এবং শহরতলীর ১০টি হাট-বাজার পহেলা বৈশাখ হতে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর মেয়াদী টোল আদায়ের লক্ষ্যে ইজারার দরপত্র আহবান করে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ। উক্ত তারিখ হতে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি করা হয় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টা পর্যন্ত সিডিউল জমা প্রদানের সময় নির্ধারণ করা হয়।

মামলার বাদী ইব্রাহীম হোসেন মিরাজ এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন দুপুর পৌনে ১টায় কুষ্টিয়া পৌরসভার ১০টি হাট-বাজার ইজারার দরপত্র পৌরসভার মেয়র কার্যালয়ের বারান্দায় রক্ষিত টেন্ডার বক্সে দরপত্র ফেলতে গেলে সেখানে ওৎ পেতে থাকা কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ নেতারা পুলিশের সামনেই তার হাত থেকে জোরপূর্বক দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলে। এ সময় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলেও অভিযোগ করেন ওই ঠিকাদার।

এদিকে প্রকাশ্যে দরপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে জলপাই রংয়ের পাঞ্জাবি পরিহিত ইব্রাহিম হোসেন মিরাজ নামের ঐ ব্যক্তি টেন্ডার বক্সে দরপত্র ফেলতে গেলে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকা অবস্থায় কয়েকজন যুবকের সাথে তার বাক-বিতন্ডা হয়। এ সময় হাতে থাকা কয়েকটি খাম বক্সে ফেলতে গেলে গেঞ্জি পরিহিত দুইজন যুবকের সাথে তার ধস্তাধস্তি হয়। ইব্রাহিম হোসেন মিরাজের হাতে থাকা খাম নিয়ে নিলে তিনিও ঐ যুবকের দিকে তেড়ে যান। এরপরে গেঞ্জি ছেঁড়া অবস্থায় ঐ যুবককে বের হয়ে চলে যেতে দেখা যায়।

এদিকে এই ঘটনার পরেই কয়েকটি গণমাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের নাম তুলে না ধরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ এবং যুবলীগের নেতাকর্মীদের নামে সংবাদ পরিবেশন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা-কর্মীরা বলেন, এই মামলা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো। প্রকৃত অপরাধীদের নাম তুলে না ধরে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের ইঙ্গিত করে সংবাদ পরিবেশন ও মামলার মাধ্যমে কোন চক্র রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এছাড়া যারা কুষ্টিয়া শহরে জঙ্গী ও মৌলবাদ বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার থাকে তাদের টার্গেট করে এই মামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী বলেন, আমি একজন প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবে পৌরসভার হাট-বাজার সংক্রান্ত ইজারা দরপত্রে অংশ গ্রহণ করি। বিগত বছর আমি পৌর এলাকায় বিভিন্ন বাজার ও জায়গায় পশু জবাহর ইজারা লাভ করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও দরপত্র জমা দেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার পৌরসভা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। এবার পশু জবাহর ইজারার দরপত্র আমিসহ ৮ জন দাখিল করেন। ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে কারা টেন্ডার ছিনতাই করেছে তা দৃশ্যমান। অথচ ঘটনার সাথে আমার সম্পৃক্ততা না থাকলেও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ ও মামলা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করছি।

কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ বলেন, আমি একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, জনগণের প্রতিনিধি। সারাদিন জনগণের সেবায় আমাকে কুষ্টিয়া পৌরসভা কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হয়। অন্যান্যদিনের মতো ঘটনার দিনও আমি আমার কার্যালয়ে ছিলাম। আমি বা কুষ্টিয়া পৌরসভার কোন কাউন্সিলর টেন্ডারবাজির সাথে কখনো জড়িত ছিল না। আর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ভিডিও ফুটেজ। ঘটনার সময় আমি পৌর কার্যালয়ে প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিনের সাথে অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। আমি এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস খন্দকার বলেন, পৌর ভবনস্থ মেয়রের কার্যালয়ের যেখানে টেন্ডার বক্স রাখা হয়েছে আমি তার আশে পাশেও ছিলাম না। অথচ আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য একটি পক্ষ আমাকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

কুষ্টিয়া শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশী দাবি করেন, আমি আমার একটি দরপত্র জমা প্রদানের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। এ ছাড়া উক্ত ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, টেন্ডার ছিনতাই করা আর পৌরসভা চত্বরে উপস্থিত থাকা এক বিষয় নয়।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দাবি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে থলের বিড়ালকে বের করে আনতে হবে। ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি উঠেছে।

Link copied!