Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

মৃত নারীকে জীবিত দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:

মার্চ ২, ২০২৩, ০৩:২০ পিএম


মৃত নারীকে জীবিত দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিস ও দলিল লেখক সমিতিতে চলছে নানাবিধ কান্ড। টাকা দিলেই মৃত ব্যক্তিকে জীবিত বানিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি ও একই অনলাইল খাজনার চেক দিয়ে একাধিক দলিল নিবন্ধন। এ যেন দেখার কেউ নেই। ঠিক তেমনি ঘটেছে উপজেলার ৫নং গাংগাইল ইউনিয়নের অরণ্যপাশা গ্রামের মৃত ফুলবানুর সাথে।

গত ৭ই ফেব্রুয়ারি ফুলবানুকে জমিদাতা সদস্য হিসাবে জীবিত দেখিয়ে নান্দাইল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি হেবা (দানপত্র) দলিল নিবন্ধিত হয়। দলিল নম্বর-১৩০৩। উক্ত দলিলটি সম্পাদনা করেছেন সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মৃত ফুলবানু অরণ্যপাশা গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের স্ত্রী। গত ২০১৬ সনে তিনি মারা যান। এরপূর্বে তিনি একমাত্র মেয়ে মিনাকে নিয়ে বিক্রিত জমিতে বসবাস করছিলেন। মা মারা গেলে মেয়ে মিনা চলে যান শ্বশুরবাড়িতে। বর্তমানে ঢাকায় স্বামীর সাথে বসবাস করছেন। কিন্তু সাত বছর পর মারা যাওয়া সেই ফুলবানুই এবার জীবিত হয়ে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ছেলের নামে হেবা করে দিলেন বিক্রীত জমি! মৃত ফুলবানু বিবির কোনো ছেলেসন্তান ছিল না। অথচ আব্দুল বারেক নামে এক ব্যক্তি মৃত ফুলবানুর ছেলে হিসাবে পরিচয় দিয়ে তার নামে ৪৯ শতক জমির হেবা (দানপত্র) দলিল নিবন্ধন করে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে জানা যায়, নাম এক হলেও তারা ভিন্ন মানুষ।

মৃত ফুলবানু বিবির স্বামী মৃত আব্দুল জলিল, মা মৃত তালজান, বাবার নাম দেওয়া নেই, জন্ম তারিখ ১৯২৯ সালের ৯ জুলাই, আইডি নম্বর ৬১১৭২৩১২৭৫৭১৪। অপরদিকে বারেকের মায়ের নাম ফুলবানু, যার স্বামী হাবিবুর রহমান, মা জরিজস বানু, বাবা তালে হোসেন ও জন্ম তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ এবং আইডি নম্বর ৯১২১৫৩৭৪৮৫।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই ফুলবানুকে দেখাশোনা করতেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মজিদা খাতুন নামে এক মহিলা। যার স্বামীর কাছে ফুলবানু জমি বৈধভাবে ২৩শতক জমি বিক্রি করেছিলেন। অন্যদিকে ১৭ শতক জমির মালিক মতিউর রহমান ও বাকি ৯ শতক জমির মালিক সামছুদ্দিন মাস্টার। তারা জমি দখলে রেখে চাষাবাদ করছেন।

তবে উক্ত বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে কথিত জমির মালিক বনে যাওয়া বারেক এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা হয়েছেন। তবে প্রতিবেশী বারেকের মায়ের নাম একই হওয়ায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। মায়ের নাম ঠিক রেখে বাবার নামের সঙ্গে ওরফে আব্দুল জলিল (মৃত ফুলবানু বিবির স্বামীর নাম) বসিয়ে মাকে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে হেবামূলে জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল বারেকের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার সেলফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে দলিল লেখক নজরুল ইসলাম ওরফে ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমি কাগজপত্র সঠিক পেয়েই তো মায়ের কাছ থেকে হেবার কাগজপত্র করে দিয়েছি। এতে দোষের কী! ৪০ বছরের জীবনে শেষ এক ধরা খাইলাম। আপনারা যেভাবেই হোক মীমাংসা কইরা দেন।

নান্দাইল উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মীর ইমরুল কায়েস আলী বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। তারপরও যারা দলিল লেখক, তাদের বিশ্বাস করেই দলিল রেজিস্ট্রি করি। তারাই আমার সামনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চেনেন বলে ঘোষণা দেন। এখন তারাই যদি প্রতারণার আশ্রয় নেন, তাহলে কী বলার আছে! এ বিষয়ে ওই অভিযুক্ত দলিল লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরএস
 

Link copied!