Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

রক্ষকের চোখে কালো চশমা, টাকা দিলেই তুলে দিচ্ছে মদ

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

মার্চ ৫, ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম


রক্ষকের চোখে কালো চশমা, টাকা দিলেই তুলে দিচ্ছে মদ

হ্যালো, আমার লোক যাচ্ছে। শেষের মোবাইল ডিজিট ৩৭। তাকে টাকার পরিমান মত (ড্রিংকস) মদ দিয়েন। স্যার আরেক বোতল দিব? ডার্লিং আর একটু ঢেলে দিই। এইসব উক্তি বা কথাগুলো নিয়মিত মদখোরদের কথন। লাখ লাখ টাকা নিয়ে যাবে সকালে শূন্য পকেটে ফিরবে। এটাই বাস্তব চিত্র। মদ নারী ও জুয়ার ফাঁদে মদখোররা সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। কাগজে কলমে অনুমতির দোহাইয়ে যারা নিয়ম তান্ত্রিকতার নামে অনুমতি নিয়ে সকল নিয়ম ভঙ্গ করে মনের ইচ্ছে মতো মদের ব্যবসা করে সরকারকে ফাঁকি দিচ্ছেন রাজস্ব এবং নিজেরা হচ্ছেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। অনুমতি দেওয়া বা শর্ত ভঙ্গণ করছে কিনা দেখার দায়িত্বকারীদের চোখে কালো চশমা। এই কালো চশমা আদৌ কখনো তাদের চোখ থেকে কি নামবে এখন শুধুমাত্র প্রশ্ন সচেতন মহলের। পাঠক এতক্ষণ নিশ্চয়ই এইসব কথাগুলো কাদের নিয়ে বলা আঁচ করতে পেরেছেন।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বৈধ বারে মাদকের অবৈধ রমরমা ব্যবসা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে শত অভিযোগ উঠলেও অভিযোগ খতিয়ে দেখা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বা শৃঙ্খলা রক্ষা দায়িত্বে থাকা শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রমাণের দোহাই দিয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। কারণ তাদের চোখে কালো চশমা। নিয়মের মধ্যে এত বড় অনিয়ম রোধে কে দায়িত্ব নিবে? মদ বিক্রির যারা লাইসেন্স দিয়েছেন, তারা মূল রক্ষক। কিন্তু তাদের রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। এর জন্য মদের বারের অনিয়মের সাথে কালো চশমা পরিহিত থাকা রক্ষকদের দায়িত্বের তদারকি করা এখন খুবই গুরুত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চল অফিসের মাধ্যমে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য চট্টগ্রামে দেশি মদের পারমিটের সংখ্যা ৩ হাজার ৭শ ৫৭টি এর মুসলিম ৩০১ ও অমুসলিম ৩৪২৬টি আর বিলেতি মদের পারমিটের সংখ্যা ১ হাজার ৬৪৯টি এর মধ্যে মুসলিম ৭৯০ অমুসলিম ৮৫৯টি। এসব পারমিটের বিপরীতে লাইসেন্সধারী দেশী মদের দোকান রয়েছে ৪টি এগুলো হচ্ছে কতোয়ালী থানা এলাকার ফিসারী ঘাট ও রিয়াজ উদ্দিন বাজারের দেশি মদের দোকান, চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথার সাধন বাবুর দেশি মদের দোকান ও ইপিজেড থানার অন্তর্গত মাইলের মাথায় অবস্থিত ছায়া রানী নাগ মালিকানাধীন দেশি মদের দোকান।

এছাড়াও দেশি বিদেশি মদের ব্যবসার লাইসেন্স রয়েছে ফিরিঙ্গী বাজার পি সেন সাত তলা এলাকায় কাজী এন্ড কোং, আলকরনের ময়নামতি স্টোর, হাজারী গণির রেটিনা এড কোং, রিয়াজ উদ্দিন বাজার পাখি গলির পপুলার এজেন্সি, পুরাতন নীকার মার্কেটিং এন্ড কোং, দেওয়ান হাটের শাহাজাদা, চৌমুহনীর বনানী ইন্টারন্যাশনাল, স্টেশন রোডের রেলওয়ে মেন্স স্টোর। বারগুলোর মধ্যে রয়েছে সদরঘাট কালি বাড়ির হোটেল শাহজাহান, আগ্রাবাদের হোটেল সেন্টমার্টিন, হোটেল আগ্রাবাদ, জিইসি এলাকায় হোটেল পেনিনসুলা, ওআর নিজাম রোডে হোটেল ওয়েলপার্ক রেসিডেন্স, জুবিলী রোডের হোটেল টাওয়ার ইন,  লির্বাটি টাওয়ারে নাইট শেডো ক্লাব লিমিটেড, পতেঙ্গা এলাকায় বোট ক্লাব, রেলওয়ে মেশ বার, সদর ঘাটের হংকং বার, কাজির দেউরী এলাকায় চিটাগাং ক্লাব ও হোটেল রেডিসন ব্লু, স্টেশন রোড এলাকায় পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল সৈকত, ডরবলমুরিং থানা এলাকার ডিপি রোডের ইস্টার্ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, জামালখানের সিটি অফিসার্স ক্লাব।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খাওয়ার পারমিট ব্যতিত কোন ক্রেতার নিকট মদ বিক্রি  করতে পারবে না মর্মে শর্ত সাপেক্ষে মাদকের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে আর মদ খাওয়ার পারমিটের প্রধান শর্ত হচ্ছে অমুসলিম হওয়া তবে অসুস্থতাজনিত কারণে যদি কাউকে অষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে মিনিমাম সহযোগী অধ্যাপক সমমানের চিকিৎসকের চিকিৎসাপত্র থাকলে পারমিট পাওয়ার সুযোগ আছে।

কিন্তু সমস্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার বেশে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই শর্ত মানছে না কেউই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত  দেদারছে বিক্রি করছে মদ। পারমিট আছে বা নাই এমন কোন প্রশ্নও করছেনা কেউ। হোক না যে কোন ব্যক্তি বা অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও টাকার বিনিময়ে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে মদের বোতল। আর এই মদ পান করে এরা হয়ে উঠছে নিয়মিত মাদকসেবী।  আর নেশার ঘোরে এক শ্রেণী হারাচ্ছে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আর অন্য শ্রেণী জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে, ঘটাচ্ছে মারামারি খুনখারাবি ও ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ। অনেক সময় নেশার টাকার যোগান দিতে পরিবারের সাথে করছে খারাপ আচরন করছে।

শুধু তাই নয় পারমিটের সাথে বিক্রয় হিসাব মেলানোর জন্য বৈধভাবে কেনা মদের চেয়ে অবৈধ ও চোরা পথে কেনা মদই বেশিরভাগ বিক্রি করে থাকে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। আর কাস্টমারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও নিয়মিত ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করছে চরমভাবে।

এ ব্য‍াপারে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী জনবল সংকটের কথা বলে বলেন, এমন তো হওয়ার কথা নয়। তবু যদি কোথাও কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব।

Link copied!