শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
মার্চ ১২, ২০২৩, ০৪:০৫ পিএম
শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
মার্চ ১২, ২০২৩, ০৪:০৫ পিএম
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন মানছেন না সরকারি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশ। একই বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন এক যুগেরও বেশী সময় ধরে। তিনি সরকারি আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বিদ্যালয় ফান্ডের লক্ষ-লক্ষ টাকা আত্মসাত করে এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর কার্যনির্বাহী পরির্ষদের সভাপতি, সদস্য ও অভিভাবকবৃন্দ লিখিত অভিযোগ করেছে।
জানা গেছে, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে ২ টি ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে গত ০১/১২/২০২২ তারিখে ওই চেক ২ টি জমা দিয়ে শ্রীপুর সোনালী ব্যাংক থেকে ১,৩২.৮০০/- (এক লক্ষ বত্রিশ হাজার আটশত) টাকা এবং জনতা ব্যাংক থেকে ৭১০০০/-(একাত্তোর হাজার) টাকা তুলে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা তার কাছে এই টাকা কোন কোন খাতে খরচ করা হয়েছে জানতে চান।
তখন প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন বলেন, তিনি কাউকে হিসাব দিতে বাধ্য নন। তিনি নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। আবার কখনো কখনো ছুঁটি না নিয়েই ব্যক্তিগত কাজে ব্যাস্ত থাকেন অথচ হাজিরা খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে রাখেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অভিবাবক ও শিক্ষকদের সাথে প্রায় খারাপ আচরণ করেন।
এছাড়াও গত ২০১৩/১৪ সালে দিকে তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (ইউএনও) এর স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন তৈরী করে শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডে জমা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের সুবিধা ভোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত করা হয়। তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে তার (প্রধান শিক্ষকের) বেতন ৫ বছরের বন্ধ ছিলো। অভিযোগ রয়েছে তিনি এই স্কুলে কোন জাতীয় দিবস পালন না করেই এসব দিবস পালনে বরাদ্দকৃত টাকা তুলে নেন। তার এহেন অশিক্ষকসুলভ আচরণে এলাকার অভিভাবকদের ভাবিয়ে তুলেছে। বিষয়টি শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হলে তিনি সহকারী শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলামকে তদন্তে পাঠান। তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে তাকেও নানা প্রকার অপমান জনক কথা বলে তাড়িয়ে দেন।
এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বনি বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন মাত্র ৪০ হাজার টাকা তুলবেন বলে আমাকে ভুল বুঝিয়ে ২ টি ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। পরবর্তীতে তিনি প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করে ২ টি চেক জমা দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৮ শত টাকা ও জনতা ব্যাংক থেকে ৭১ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে এই টাকা ব্যায়ের হিসাব চাইলে হিসাব না দিয়ে তিনি মাস্তান সুলভ আচরণ করছেন। আমরা এখন তার বিরুদ্ধ বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা ইয়াসমিন এর সাথে কথা বলার জন্য কাদিরপাড়া সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ে গেলে তাকে না পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি আমাদের ডিপার্টমেন্টের বিষয়। আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। গত শনিবার সাংবাদিকরা তার বাসায় তার বক্তব্য নেওয়ার সময় তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন আমি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হব।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সবিতা রানী ভদ্র বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলামকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগের পরিপেক্ষিতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের বিষয়ে গত ৫ মার্চ একটি চিঠি পেয়েছি। আগামী ২৩ মার্চ এ বিষয়ে তদন্ত হবে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।